ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম।
বাংলাদেশের বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ডাচ বাংলা ব্যাংক। এখানে ব্যাংক একাউন্ট খুললে আপনি মোবাইল ব্যাংকিং সেবাও নিতে পারে। রকেট’ বাংলা ব্যাংক এর মোবাইল ব্যাংকিং সেবার নাম। তবে বর্তমানে কার্ড খরচ সহ, নানা প্রোটোকল প্রবর্তন করেছে ডাচ বাংলা ব্যাংক তাই এই ব্যাংক এ একাউন্ট খোলার আগে সম্ভব হলে আপনার নিকটস্থ শাখা কিংবা রকেট সেন্টারে গিয়ে খোঁজ খবর নিতে পারেন। ডাচ বাংলা ব্যাংক এ একাউন্ট খোলার নিয়ম তুলনামূলক অন্য ব্যাংক থেকে সহজ।
একাউন্ট প্রকারভেদঃ
ডাচ বাংলা ব্যাংক এ আপনি দুই ধরণের গ্রাহক সেবা গ্রহণ করতে পারেন একাউন্ট খোলার মাধ্যমে। অর্থাৎ আপনি দুই ধরণের একাউন্ট খুলতে পারেন এখানে। এগুলো হলো-
১.সেভিংস একাউন্ট এবং
২.স্টুডেন্ট একাউন্ট।
খুব সহজেই আপনি অল্প কিছু টাকা জামানত রাখার মাধ্যমে এই দুই ধরণের একাউন্ট খুলতে পারেন। তাহলে আর দেরি কেনো,একাউন্ট খুলতে আপনার কি কি কাগজ পত্র সরবারাহের প্রয়োজন হবে এবং কি কি শর্ত সমূহ মানতে হবে তা জেনেন নিন এই আর্টিকেল থেকে।
ডাচ বাংলা ব্যাংক সেভিংস একাউন্টঃ
ব্যাংক এর মাধ্যমে মানি ট্রান্সপার করতে হলে অবশ্যই একটি সেভিংস একাউন্ট থাকা চাই। সেক্ষেত্রে আপনি যে কোন কাজের জন্যে সেভিংস একাউন্ট খুলতে পারেন। আমরা বিদেশে টাকা লেনদেন করতে কিংবা দেশে নিজের ব্যবসার কাজে, স্যালারির কাজে সেভিংস একাউন্ট খুলে থাকি। ডাচ বাংলা ব্যাংক তার গ্রাহকদের স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলার সুবিধা দিয়ে থাকে। যেখানে মানি ট্রানজেকশনের নানা লিমিটেশন থাকে। কিন্তু সেভিংস একাউন্টে তেমন কোন লিমিটেশন থাকে না। এখানে আপনি লিমিটেশনের মধ্যেও আনলিমিটেড মানি ট্রান্সপার করতে পারেন।
এখন আমরা জেনে নিব কি কি ডকুমেন্টস লাগে ডাচ বাংলা ব্যাংক এ একটি সেভিংস একাউন্ট খুলতে-
১.আপনার এন আইডি কার্ড বা ড্রাইভিং লাইসেন্সের একটি কপি।
২.পাসপোর্ট সাইজের দুটি ছবি যা সর্বনিম্ন ৩ মাসের মধ্যে তোলা হয়েছে।
৩.ই টি এন সনদ।
৪.ট্রেড লাইসেন্স।
৫.আপনি যাকে নমিনি করবেন তার ছবি এবং এন আইডি ফটো কপি।
৬.ডাচ বাংলা ব্যাংক এ একাউন্ট রয়েছে এমন ব্যক্তির ছবি এবং এন আইডি কার্ডের কপি।
৭. একাউন্ট খুলতে হলে ৫০০ টাকা জামানত হিসেবে জমা রাখতে হবে।
উক্ত ডকুমেন্টস গুলোর মাধ্যমে আপনি এই ব্যাংকে সেভিংস একাউন্ট খুলতে পারেন। স্টুডেন্ট একাউন্টের ক্ষেত্রেও প্রায় একি ডকুমেন্টস ই লাগে। এই কাগজপত্র গুলি দিয়ে আপনি আপনার নিকটস্থ ডাচ বাংলা ব্যাংকের যে কোন শাখা থেকে সেভিংস একাউন্ট খুলে নিতে পারেন যদি চান। সেভিংস একাউন্ট খোলার ৩-৪ দিনের মধ্যে তা একটিভ হয়। এছাড়া একাউন্ট খোলার মাধ্যমে আপনি নেক্সাস কার্ড পাবেন। এটির জন্যে বার্ষরিক একটি নির্দিষ্ট এমাউন্ট কাটা হয়। এই কার্ড দিয়ে আপনি বুথ থেকে টাকা নিতে পারবেন। যখন আপনার একাউন্ট এক্টিভ হবে তা আপনার মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে জানিয়ে দেয়া হবে।
এছাড়া কেউ যদি চায় ব্যাংক শাখায় যাওয়ার আগে ব্যাংকে জমা দেয়ার জন্যে পূরণকৃত ফর্মটি ডাউনলোড করে পূরণ করে নিতে পারে। নিচের লিংক থেকে সহজে ফর্মটি ডাউনলোড করুন-
https://www.dutchbanglabank.com/electronic-banking/forms.html#accopen
ডাউনলোড করে তা প্রিন্ট করে পূরণ করুন। এবং নিকটস্থ শাখায় বা বুথ সেন্টারে গিয়ে জমা দিয়ে উপরোক্ত শর্ত গুলো পূরণ করার মাধ্যমে সহজেই একাউন্ট খুলতে পারেন৷
সেভিংস একাউন্ট লিমিটেশনঃ
সচারাচর ব্যাংক গুলোতে একাউন্ট খোলার পর কিছু লিমিট থেকেই যায়। তেমনি ডাচ বাংলা ব্যাংকে সেভিংস একাউন্ট খুললেও আপনাকে বেশ কিছু লিমিটেশন মানতে হবে। যেমন, বিভিন্ন চার্জ ফী দিতে হতে পারে। মেন্টেন্যান্স চার্জ কাটতে পারে। যেমন,২০২১ সালে ব্যাংকটি তাদের প্রটোকল চেঞ্জ করে গ্রাহকদের সেভিংস একাউন্টে নূন্যতম ৫ হাজার টাকা রাখতে বলে নতুবা একাউন্ট বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। পরবর্তীতে অবশ্য তা বাতিল করা হয়েছে।
এছাড়া আরো লিমিটেশন সম্পর্কে জানতে ডাচ বাংলা ব্যাংক এর হটলাইন নাম্বারে যোগাযোগ করতে পারেন। “১৬২১৬” এটি তাদের কাস্টমার কেয়ারের নাম্বার। যাতে সরাসরি কল করার মাধ্যমে আপনি বিস্তারিত জেনে নিতে পারবেন।
ডাচ বাংলা ব্যাংক স্টুডেন্ট একাউন্টঃ
ছাত্র বয়সে ছোট খাট ইনকাম বা সেমিস্টার ফীর কারণে বা নানা কারণেই আমাদের স্টুডেন্ট একাউন্ট প্রয়োজন হতে পারে। তাই শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে তাদের এই গ্রাহক সেবা চালু করেছে। যার জন্যে খুব বেশি জটিল কোন শর্ত মানতে হয় না। চাইলে অল্প কিছু ডকুমেন্টস দিয়ে আপনি এই একাউন্ট খুলতে পারবেন। ডাচ বাংলা ব্যাংক স্টুডেন্ট একাউন্ট খুলতে যা প্রয়োজন হবেঃ
১. এন আইডি কার্ডের ফটো কপি।
২.স্টুডেন্ট আইডি কার্ড।
৩.নমিনির আইডি কার্ড।
৪.পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
৫. পাঁচশত টাকা জমা রাখতে হয়।
৬. নমিনি দিতে হয় অবশ্যই, তাই ছবিও দিতে হবে নমিনির।
৭.উক্ত ব্যাংকে একাউন্ট আছে এমন ব্যক্তির ডকুমেন্টস।
ব্যাংকে একাউন্ট আছে এমন ব্যক্তির ডকুমেন্টস অনেক সময় নাও লাগতে পারে। এই শর্ত নমনীয়।
এই সকল ডমকুমেন্টস নেয়ার মাধ্যমে আপনি বুথ সেন্টার বা সরাসরি ব্যাংক শাখা থেকে একাউন্ট খুলতে পারেন।
এছাড়া নিচের লিংক হতে ফরম ডাউনলোড করে আপনি তা পূরণের মাধ্যমে একাউন্ট খোলার কাজ এগিয়ে রাখতে পারেন।
https://www.dutchbanglabank.com/electronic-banking/forms.html#accopen
এই ফরমটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিন এবং যত্ন সহকারে সঠিক ও যুক্তিযুক্ত তথ্য দিয়ে পূরণ করে তা অন্য কাগজপত্রের সাথে নিকটস্থ ব্যাংক শাখায় না বুথ সেন্টারে গিয়ে জমা দিন। যদি আপনার সকল তথ্য সঠিক হয় তাহলে ২/৪ দিনের মধ্যে একাউন্ট এক্টিভ হবে। যা কার্ডের সাথে সংযুক্ত করতে করা হয়ে যাবে। এক্টিভ হলে আপনি ব্যাংক হতে মেসেজ পাবেন। উক্ত মেসেজে আপনার একাউন্ট নাম্বার আপনাকে জানিয়ে দেয়া হবে। এবং আপনি একাউন্টটি ব্যবহার করতে পারবেন।
সুবিধা অসুবিধাঃ
স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলার পর কিছু লিমিটেশন রয়েছে। আপনাকে একটি বুথ কার্ড দেয়া হবে। কোন চেক বই এই ক্ষেত্রে সরবারাহের ব্যবস্থা নেই। আপনি কার্ড দিয়েই লেনদেন করতে পারেন। এছাড়া আপনি যে কোন এমাউন্ট একাউন্টে রাখতে পারবেন। কার্ডের জন্যে বার্ষরিক ২৪৫ টাকা কাটা হবে। আপনার নেক্সাস কার্ডটি দিনে সর্বোচ্চ ৫ বার ব্যবহার করতে পারবেন। প্রতিমাসে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা লেনদেন করার সুযোগ রয়েছে। দিনে আপনি সর্বোচ্চ পঞ্চাশ হাজার টাকা তুলার সুবিধা রয়েছে।
উপসংহারঃ
উপরে উল্লেখিত সুবিধা অসুবিধা এবং শর্ত সমূহ জানার পর যদি আপনি আগ্রহী হোন তাহলে এই সকল সহজ নিয়ম গুল অনুসরণ করে খুব সহজে একাউন্ট খুলে ডাচ বাংলা ব্যাংক থেকে গ্রাহক সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন।