পরীক্ষার প্রস্তুতি।

পরীক্ষার প্রস্তুতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সামনেই অনেকের পরীক্ষা। বোর্ড পরীক্ষা কিংবা চাকরির যাই হোক না কেনো পরীক্ষা মানেই পরীক্ষার্থীদের চাপ বেড়ে যাওয়া। অনেকের আবার থাকে না পর্যাপ্ত প্রস্তুতি। আবার অনেকে আছে পরীক্ষার জন্যে দুঃশ্চিন্তায় আছে ঠিকই কিন্তু পড়তে পারছে না। পরীক্ষা প্রস্তুতি সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় নিয়ে তাই আজ আলোচনা করব। আসুন জেনে নি পরীক্ষায় ভাল করতে হলে কিভাবে কি প্রস্তুতি নিতে হবে।

ইজি নোটস করাঃ

পরীক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে প্রথম থেকে একটি নোটস তৈরি করা উচিত। চাইলে আলাদা আলাদা বিষয়ের উপর করতে পারেন। এতে করে পরীক্ষার আগে সব এক সাথে না পড়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলোতে চোখ বুলিয়ে নেয়া যাবে। এতে কম সময়ে ভালো প্রস্তুতিতে বেশ ভালো পরীক্ষা দেয়া সম্ভব। তবে আপনার নোটস আপনি নিজের মত করে বানাবেন। যা শুধু আপনি বুঝলেও চলব। তাই নোটস একটি মোক্ষম হাতিয়ার।

পড়ার রুটিন করাঃ

একজন পরীক্ষার্থীর একটি রুটিন থাকা অনিবার্য। তবে তা লিখিত অলিখিত দুটিই হতে পারে। আপনি যদি কোথাও লিখে রুটিন না বানিয়ে নিজের মত আপনার পরীক্ষার আগের দিন গুলো কিভাবে কাজে লাগাবেন তা সাজিয়ে নিন মনে মনে তাহলেও তেমন কিছু অসুবিধা নেই। কারণ অনেকের পক্ষেই লিখিত রুটিন অনুসরণ করা সম্ভব হয় না। তাই দেরী না করে নিজের দিন ভাগ করে নিন। কিভাবে কখন কি করবেন তা সাজিয়ে নিয়ে গুছিয়ে পড়ুন।

পড়া মনে রাখার উপায়ঃ

বার বার পড়া মনে রাখার জন্যে একটি সনাতন পদ্ধতি। যা যুগ যুগ ধরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রচলিত। তবে বিখ্যাত শিক্ষা বিষায়ক গবেষণা গুলোতে দেখা গেছে যে একটি পড়া বার বার পড়া থেকেও কার্যকরি হলো দু একবার পাঠ করার পর তা মনে করার চেষ্টা করা। যা আপনার ব্রেইনকে খাটাবে এবং ব্রেইন বুঝবে আমার এটি মেমোরাইজ করতে হবে। তাহলে আপনি প্রস্তুতি এটি করতে পারেন যে কোন পড়া একবার পড়ে তা মনে করার চেষ্টা বার বার করুন। এবং এভাবে মুখস্ত করুন।

লিখে পড়াঃ

হাই স্কুকে আমাদের সব সময় বলা হতো একবার লিখা ১০ বার পড়ার চেয়ে কাজের। এটি বড় হয়ে অনেকেরাত কাজে লাগে। যখন কেউ বিসিএস এর মত দীর্ঘ মেয়াদি প্রস্তুতির কোন পরীক্ষা দেয় সেক্ষেত্রে তারা লিখে কোন কিছু চর্চা করতে পারেন। এভাবে বিষয়টি আপনার সহজেই মনে থাকবে। এতে লিখার হাতও পাকা পোক্ত হবে।

পড়ার সারমর্ম লিখাঃ

একটি বড় পড়া পড়ে তার সারমর্ম বা Summery লিখা হলো পরীক্ষার পড়া মনে রাখার কার্যকরী কৌশল। তবে হ্যাঁ এটি দেখে দেখে করা যাবে না। আপনি যখন কোন কিছু দেখে লিখবেন আপনার ব্রেইন সহজে সেটি করবে। কিন্তু আপনি না দেখে সারমর্ম লিখতে চেষ্টা করলে ব্রেইন খাটবে। এতে করে বিষয়টি আপনার ভালো করে মনে থাকবে। তাই যেকোন বিষয় সেটি যদি গুরুত্বপূর্ণ হয় তাহলে পড়ার পর লিখে ফেলুন।

সময়কে যথাযথ কাজে লাগিয়ে পড়াঃ

পরীক্ষা চলে এসেছে আর আপনি বসে বসে সিরিজ দেখছেন? অথবা দেখছেন সদ্য রিলিজ হওয়া দক্ষিণের কোন সিনেমা? আবার এই দিকে পরীক্ষা হাতের কাছে বলে চিন্তাও করছেন? অবাক হওয়ার কিছুই নেই! এটি বর্তমানের প্রায় সকল শিক্ষার্থীদের একটি সাধারণ সমস্যা। আসলে প্রযুক্তির এই যুগে ফেইসবুক,ইউটিউব,মেসেঞ্জারের ফাঁকে পড়ার সময় বের করাই কঠিন! কিন্তু এমন হলে আপনি নিজেই ফাঁদে পড়ে আছেন ধরে নিন। কারণ আপনার পরিচিত অনেকেই এতক্ষণে অনেকটা এগিয়ে আপনার থেকে। কারণ যে বাড়তি সময় টুকু আপনি নষ্ট করছেন আপনার ডিভাইসে সেই সময় টুকু আরেকজন বেশি পড়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই যত কম এসবে সময় দিয়ে নিজের পড়ায় মনযোগী হবেন তত আপনারই লাভ।

টেকনিক্যালি পড়াঃ

যার যার পড়ার পদ্ধতি আলাদা হয়। একজনের পরামর্শ তাই অন্যের সাথে না মিলা একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। মানুষ হিসাবে আমরা যেমন আলাদা আমাদের পরিল্পনাও তেমনি আলাদা হয়ে থাকে। তাই আপনার টেকনিক আপনি নিজেই ভালো অনুভব করতে পারবেন। এবং আপনার পড়ার স্টাইল আপনি নিজের মত ঠিক করতে পারেন। এক্ষেত্রে অন্যের টেকনিক অনুসরণ কার্যকরী না।

কঠিন বিষয় আগে পড়াঃ

আপনার পরীক্ষা নিকটে হলে আপনি কঠিন বিষয় আগেই পড়ে রাখুন। এমন অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা পরীক্ষার আগে পড়তে বসে। ভালো ছাত্র হওয়া শর্তেও ভালো রেজাল্ট করতে পারে না। আবার অনেক ছাত্র আছে যারা অনেক দিন ধরে ধীরে পড়ে ভালো ফলাফল করে। এর কারণ হলো একটি কঠিন বিষয়কে সেই ছাত্র আগে থেকেই সমাধান করে নেয় ধীরে ধীরে। তাই পরীক্ষার সময় ব্রেইন যখন হাই ফ্লো তে থাকে তখন তার পড়াটি খুব ভালো করে মাথায় গেঁথে যায়। অন্য দিকে ভালো ছাত্র আগে পড়ে না রাখার ফলে তার ব্রেইনের কাছে বিষয়টি নতুন মনে হওয়াতে সে কম বুঝতে পারে। এবং পরীক্ষার সময় দ্রুত ব্রেইন তা ক্যাচ করতে পরে না। তাই আপনি যত ভালো ছাত্র হন না কেনো যেকোন বিষয় আগে থেকে কয়েকবার পড়ে অনুশীলন করা উত্তম।

BCS প্রস্তুতি এর পড়াঃ

আপনি একজন ক্যাডার হতে হলে আপনাকে সবার আগে দায়িত্বশীল হতে হবে। ডেডিকেটেড হতে হবে। এক্ষেত্রে তা পড়ার ব্যাপারেও প্রয়োগযোগ্য। এর ফলে যা হবে আপনি চাপ নেয়া শিখবেন। বিসিএস একটি লম্বা প্রক্রিয়া, এই দীর্ঘ সময় আপনাকে পড়ার সাথেই থাকতে হবে। তাই মানসিক ভাবে পড়ার সাথে এডজাস্ট হয়ে যান। প্রথমেই বিসিএস সিলেবাসটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিন। তারপর একটি রুটিন করে সিলেবাস অনুযায়ী পড়া আরাম্ভ করুন। এক্ষেত্রে বাজারে সব বিষয়ের বই পাবেন। তবে যেই বই গুলো বিসিএস সিলেবাস কাভার করেছে তা কিনুন। এই ব্যাপারে আপনার আশপাশে কেউ প্রস্তুতি নিয়ে থাকলে তাদের পরামর্শ গ্রহণ । নিয়মিত পড়ার রুটিন করে সিলেবাস শেষ করুন।

শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি ও পড়াঃ

https://www.bbc.com/bengali/news-48317490.amp
পরীক্ষার ঠিক আগে স্ট্রেস এর কারণে আমাদের শরীরে বিশেষ কিছু হরমোন বাড়ে। যার ফলে মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতা দ্রুত গতির হয়। এই সময় পড়া সহজে মনে রাখা যায়। বেশি পড়া একসাথে মনে রাখতে ও ভালো ফলাফল করতে তাই আগের করা নোটস গুলোতে চোখ বুলিয়ে নিন।

পরিশেষে বলব যার যার প্রস্তুতি আলাদা হয়। কিন্তু দিন শেষে সেই সফল হয় যে সিস্টেমেটিকেলি পড়ে। নিজেকে যাচাই করতে এই পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করে দেখতে পারেন। যা আপনার অনেকাংশেই কাজে লাগবে বলে আশা করছি। কেনোনা এগুলো হিউম্যান সাইকোলজি ও বৈজ্ঞানিক ভালো পরীক্ষিত।

admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *