মালয়শিয়ায় উচ্চশিক্ষা ও স্কলারশিপ (A টু Z) বিস্তারিত

মালয়শিয়ায়  উচ্চশিক্ষা ও স্কলারশিপ (A টু Z) বিস্তারিত

এশিয়ার দেশ গুলোর মধ্যে বেশ কিছু দেশে রয়েছে উচ্চশিক্ষার জন্যে দারুণ সব স্কলারশিপ। বাংলাদেশ সহ উচ্চশিক্ষা প্রত্যাশি শিক্ষার্থীদের চাহিদা এই সব দেশের অসাধারণ সব স্কলারশিপ। আজকে আলোচনা করব এশিয়ার দেশ গুলোর মধ্যে মালয়শিয়ায় উচ্চশিক্ষা ও স্কলারশিপ নিয়ে৷

বিস্তারিতঃ
মালয়শিয়াকে এশিয়ার ইউরোপ বলা হয়। উচ্চশিক্ষার জন্য এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মালয়শিয়া। মালয়শিয়াতে বর্তমানে লাখেরও বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী পিএচডি প্রোগ্রাম সহ উচ্চশিক্ষার প্রোগ্রাম গুলোতে অধ্যায়নরত আছে৷
মালয়শিয়ায় শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার প্রথম পছন্দ হওয়ার কারণ এখানে টিউশন ফী সহ শিক্ষা খরচ কম পড়ে। এছাড়া মালয়শিয়াতে ডিগ্রী শেষে ইউরোপ-আমেরিকা, কানাডা সহ বেশ কিছু উন্নত দেশে রয়েছে ক্যারিয়ার গড়ার সুবর্ণ সুযোগ।
বাংলাদেশ থেকে মাত্র সাড়ে তিন ঘন্টায় মালয়শিয়াতে যাওয়া যায়, এছাড়া মালয়শিয়াতে উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি জব করার জন্যে সময় পাওয়া যায় যার কারণে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দ মালয়শিয়া। এখানে যে কোর্স গুলো পড়া যায়ঃ

মালোশিয়ায় উচ্চশিক্ষা


১.ডিপ্লোমা যা ২-৩ বছর মেয়াদি হয়।
২.আন্ডারগ্রাজুয়েট ৩-৫ বছর মেয়াদি।
৩.পোস্ট গ্রাজুয়েট, দেড় থেকে দুই বছর মেয়াদি এবং
৪.ডক্টরাল ৩-৫ বছর মেয়াদি। (PhD)

মালয়শিয়ার সেমিস্টার শুরু হয় মূলত ৩ ভাগে। তাই আপনি মালয়শিয়ায় পড়াশোনা করতে চাইলে এই সেমিস্টারের ভাগ গুলো দেখে আবেদন করতে পারেন যদিও ইউনিভার্সিটি অনুযায়ী স্প্রিং সেমিস্টার জানুয়ারি বা মার্চে শুরু হয়। তবে সাধারণত জানুয়ারি থেকে এপ্রিলে প্রথম সেমিস্টার।
মে-আগষ্ট দ্বিতীয় সেমিস্টার এবং সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরে তৃতীয় সেমিস্টার হয়।

কেন মালয়শিয়ার পড়তে যাবেন?

মালয়শিয়া পড়তে যাওয়ার উদ্দেশ্য হলে তার বিশেষ যে কারণ থাকতে পারে তা হলোঃ

১.মালয়শিয়া জীবন যাত্রার মান উন্নত।
২.মুসলিম প্রধান দেশ হওয়াতে হালাল খাদ্য এবং নিজ নিজ ধর্মপালনের সুযোগ রয়েছে।
৩.পর্যটন প্রধান রাষ্ট্র হওয়াতে এখানে নানা দেশের নানা সংস্কৃতির মানুষের আগমন হয় বলে এটি উন্নত মননের দেশ।
৪.UNESCO এর জরিপ অনুযায়ী উচ্চশিক্ষায় মালয়শিয়ার স্থান ৯ম।
৫. এখানে স্টুডেন্ট ভিসায় আবেদন করলে ডকুমেন্টস ঠিক থাকলে ৯৯% সম্ভাবনা থাকে ভিসা পাওয়ার।
৬. এখানের আবহাওয়া আরামদায়ক। বৃষ্টির সিজন শুরু হয় সাধারণত সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বরে। এছাড়া সারাবছর একি আবহাওয়া থাকে।
৭.মালয়শিয়ায় ভাষা নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করতে হয় না। ইংরেজিতে কথা বলেই আপনি যোগাযোগ রক্ষা করতে পারবেন।

কি কি বিষয় পড়তে যেতে পারেন

মালয়শিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় গুলো আন্তর্জাতিক মানের। এখানের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মালয়শিয়ান শিক্ষার্থীদের জন্যে পড়ার খরচ কম হলেও বাংলাদেশি বা অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীদের সে সুযোগ নেই৷

মালয়শিয়ায় আপনি কি বিষয় পড়তে চান তা আগে থেকে চিন্তা করে নিন। যেহেতু এটি আপনার ক্যারিয়ারের সাথে সম্পর্কিত তাই যাচাই বাচাই করে পছন্দ করুন। এখানের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে যা যা পড়তে পারবেন তা হলোঃ

১.ইংরেজি।
২.আইন।
৩.ডেন্টাল।
৪.বিবিএ।
৫.সমাজবিজ্ঞান।
৬.গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা।
৭.রসায়ন।
৮.হোটেল ম্যানেজমেন্ট এন্ড ট্যুরিজম।
৯.মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং।
১০.টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং।
১১.সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং।
১২. মেডিসিন সাইন্স।
১৩.হেলথ টেকনোলজি।
১৪.কম্পিউটার সাইন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং।
১৫.বিজন্যাস এডমিনিস্ট্রেশন।
১৬.ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং।
এছাড়াও আরো নানা বিষয়।

মালয়শিয়ায় স্কলারশিপ

খুব ভালো একাডেমিক রেজাল্ট ও ইংরেজিতে ভালো দক্ষতা থাকলে আপনি মালয়শিয়ায় ভালো স্কলারশিপ পেতে পারেন। তবে ফুল স্কলারশিপ না পেলেও পেতে পারেন আংশিক স্কলারশিপ।
মালয়শিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় গুলো বেশ কিছু স্কলারশিপ দিয়ে থাকে৷ যেমনঃ

১.বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ফান্ড। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় গুলো ৫০% এর মত শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে আপনি দেখতে পারেন কোন বিশ্ববিদ্যালয় কোন শর্তে বৃত্তি দিচ্ছে।

২.কমনওয়েলথ স্কলারশিপ। প্রতিবছর সাবেক যুক্তরাজ্য শাসিত দেশ গুলোর শিক্ষার্থীদের জন্যে বিশ্বব্যাপি এই স্কলারশিপ দেয়া হয়।

৩.মালয়শিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কলারশিপ।

৪. এছাড়া রিসার্চ এসিস্ট্যান্ট হিসেবে স্কলারশিপ পাওয়া যায়।

মালয়শিয়ায় কিভাবে ভর্তি হবেন?

মালয়শিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হলে ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জন জরুরি। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদা অনুযায়ী ইংরেজি দক্ষতার যেকোন আন্তর্জাতিক পরীক্ষা দিয়ে রাখা উচিৎ। যেমন,আইএলটিএস, জিআরি ইত্যাদি।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদা অনুযায়ীই রিকমেন্ডেশন লেটার,ইংরেজি দক্ষতার সার্টিফিকেট, আপনার বিগত একাডেমিক যোগ্যতার সার্টিফিকেট,ইত্যাদি ডকুমেন্টস স্ক্যান করে আপনার পছন্দের ইউনিভার্সিটিতে পাঠান। এপ্রুভ হলে অপার লেটার আসবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। কেবল মাত্র অপার লেটার পেলে আপনি তা দিয়ে ভিসা আবেদন করতে পারবেন। মালয়শিয়াতে স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়া সহজ। আর ভিসা পাওয়ার পর আপনি ইউনিভার্সিটি ফী দিতে হবে তাই স্টুডেন্ট ভিসা নিরাপদ।
ভিসা এপ্লাইয়ের পর ভিসা চেক করার জন্যে EMGS এর ওয়েবসাইট ভিজিট করলেই জানতে পারবেন এপ্রুভ হয়েছে কিনা। তবে এটি করতে হবে অপার লেটার পাওয়ার পর। এর জন্যে আপনাকে এম্বেসিতে যেতে হবে না বরং ঘরে বসে নিজের মোবাইল থেকেই ওয়েবসাইট ভিজিট করে জেনে নিতে পারবেন।

পরিশেষঃ বাংলাদেশের সাথে মালয়শিয়ার সংস্কৃতিগত মিল থাকায় এখানে পড়তে যাওয়া তুলনা মূলক ভালো অন্যান্য দেশ থেকে। এখানের বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মতই খরচ হয়। অতএব,উচ্চশিক্ষার জন্যে মালয়শিয়া হতে পারে সঠিক দেশ।

admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *