গ্যাস্ট্রিক হলে কি করবেন

গ্যাস্ট্রিক হলে কি করবেন

গ্যাস্ট্রিক বর্তমানে একটি সর্বজনীন সমস্যা। একটু খাবারের অনিয়ম করলেই কি বুকে জ্বালা পোড়া, পেট ব্যথা সহ নানা সমস্যার সমূক্ষিণ হচ্ছেন আপনি? বমি বমি ভাব, পেট ফেপে থাকা এসবও কিন্তু গ্যাস্ট্রিকেরই লক্ষণ। বর্তমানে খাবারে ভেজাল, অস্বাস্থ্যকর খাবারের ছড়াছড়ি, দূষিত পানি নানা কারণে বাড়ছে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা। আজ আলোচনা করব গ্যাস্ট্রিক হলে কি করবেন। কেন গ্যাস্ট্রিক হয় এবং নিরাময়ের ঘরোয়া উপায় নিয়ে।

লক্ষণ-

বমি বমি ভাব,বুকে জ্বালাপোড়া, তিব্র পেট ব্যথা হওয়া গ্যাস্ট্রিকের প্রাথমিক লক্ষণ। নিঃশ্বাস নেয়ার সময় ব্যথা অনুভব করাও এর লক্ষণ। গ্যাস্ট্রিকে খাওয়ার পর পর পেটে ব্যথা হয়। এছাড়া খালি পেটেও ব্যথা হয়ে থাকে। ভাজাপোড়া খেলে,না খেয়ে থাকলে এই ব্যথা হতে থাকে। টক ঢেঁকুর উঠাও গ্যাস্ট্রিকের অন্যতম লক্ষণ।

গ্যাস্ট্রিক কি ও কেনো হয়-

গ্যাস্ট্রিক বলতে আদতে কোন রোগ নেই!
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায়, পেপটিক আলসার নামে পরিচিত এই
অসুখ কে আমরা প্রচলিত ভাষায় গ্যাস্ট্রিক বলি। চিকিৎসকদের কথা অনুযায়ী, যারা দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকে,অনিয়মিত খাবার খায় এবং অতিরিক্ত মশলা-তেল যুক্ত খাবার খায় তাদের এই রোগ হয়ে থাকে।

আসলে অতিরিক্ত এসিড নিঃসৃত হয়ে তা পাকস্থলীর মিউকোসার পর্দা নষ্ট করে প্রদাহের সৃষ্টি করলে এটি হয়। এছাড়া পৌষ্টিক তন্ত্র থেকে অতিরিক্ত পেপসিন নিঃসৃত হলে এই রোগ হতে পারে। পেপসিন প্রোটিন পরিপাকে সাহায্য করে। কিন্তু এর অতিরিক্ত নিঃসরণ পৌষ্টিক তন্ত্রের বিপদ ডেকে আনে।

পাকস্থলীতে অতিরিক্ত এসিড তৈরী হওয়ার কারণ হলোঃ ব্যথানাশক ঔষুধ গ্রহণ, ভাজাপোড়া খাওয়া,দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা,অনিদ্রা,অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা,ধুমপান ইত্যাদি । যদি জন্মগতভাবে কারো পৌষ্টিক তন্ত্রে সমস্যা থেকে থাকে তাহলেও হতে পারে গ্যাস্ট্রিক। গ্যাস্ট্রিক কেবল পাকস্থলীতে নয় বরং পৌষ্টিক তন্ত্রের যেকোন জায়গায় হতে পারে।
এছাড়া,হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি নামক ব্যাকটেরিয়া পাকস্থলীর মিউকোসার পর্দা নষ্ট করে গ্যাস্ট্রিক ঘটায়।

প্রতিরোধ-

গ্যাস্ট্রিক প্রতিরোধের প্রথম শর্ত হলো নিয়মিত রুটিন মাফিজ খাবার খাওয়া। ভাজাপোড়া,মশলা যুক্ত খাবার না খাওয়া। অথবা পরিমিত খাওয়া। দিনে কমপক্ষে ৭-৮ গ্লাস পানি পান করা। পানি পানের অভ্যাস এই রোগ প্রতিরোধে সব চেয়ে কার্যকরী উপায়।

শাক সব্জিতে ফাইবার থাকে৷ ফাইবার যুক্ত খাবার আমাদের পেটকে অনেক্ষণ ভরা রাখে। তাই ফলমূল, সবুজ শাক সবজি বেশি বেশি খাওয়া উচিত।
ধুমপান-মদ্যপানের বদভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে।
ব্যথানাশক ঔষুধ গ্রহণের আগে গ্যাস্ট্রিকের ঔষুধ গ্রহণ করতে হবে। ব্যথানাশক ঔষুধ যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। ঝাল খেলে যাদের বুক জ্বালাপোড়া করে তারা ঝাল এড়িয়ে চলবে।

এছাড়া,নিয়মিত ঘুম,ব্যায়াম, দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকা গ্যাস্ট্রিক প্রতিরোধে মহাঔষধ।
আমরা অনেকেই বাজারে প্রচলিত গ্যাস্ট্রিকের ঔষুধ গ্রহণ করা অভ্যাস করে ফেলি। যা একদম উচিত নয়। কারণ এটি আপনার পাকস্থলীর গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থীর প্রদাহ কমিয়ে দিয়ে বিপদ ডেকে আনে। তাই যখন তখন ব্যথা হলেই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ সেবন বাদ দিন।

চিকিৎসা-

সাধারণত গ্যাস্ট্রিকের চিকিৎসায় অ্যান্টাসিড জাতীয় ঔষুধ দেয়া হয়। দীর্ঘদিন যাবত ঔষুধ সেবনেও যদি সমস্যার সমাধান না হয় তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষা নিরীক্ষা করে উপযুক্ত চিকিৎসা নিতে হবে। এছাড়া যাদের জন্মগত পৌষ্টিক তন্ত্রের সমস্যা তাদের অনেক সময় অপারেশন লাগতে পারে। কিছু রোগী তাদের সমস্যা এত বাড়িয়ে ফেলেন যে পৌষ্টিক নালী সরু হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে তা অপারেশনের মাধ্যমে ঠিক করতে হয়।

অন্যদিকে যারা জীবাণু অর্থাৎ ব্যাকটেরিয়া জাতীয় সমস্যার কারণে গ্যাস্ট্রিকে ভুগছে তাদের উপযুক্ত ঔষুধ প্রদান করা হয়। যাতে জীবাণু ধ্বংসের মাধ্যমে সঠিক সময়ে সমাধান হয়।

চিকিৎসায় দেরি না করা-

পেপটিক আলসার বা গ্যাস্ট্রিক এর চিকিৎসা সময় মত না করলে তা মৃত্যুও ডেকে আনতে পারে।দীর্ঘদিন এই সমস্যায় ভুগলে পাকস্থলী ফুটো হয়ে যেতে পারে৷ যা ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। এছাড়া পরিপাক নালী সরু হয়ে বার বার বমি হতে পারে। রক্তবমি ও কালো পায়খানা হতে পারে। রক্তক্ষরণ হয়ে তা রক্তশূন্যতার কারণ হতে পারে। তাই সময় থাকতে এর চিকিৎসা করানো উচিত।

ঘরোয়া পদ্ধতি-

গ্যাস্ট্রিক এর কারণে খাবার হজম করতে বেশ অসুবিধা হয়৷ এছাড়া শরীরে অশান্তি তো লেগেই থাকে। গ্যাস্ট্রিক কমানোর জন্যে ঘরোয়া যে পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারেন তা হলো-

খাবার খাওয়ার পর সাথে সাথে শুয়ে বসে না থেকে হাঁটাহাঁটির মাধ্যমে পেটে জমে থাকা বাড়তি গ্যাস বের করা। সকাল বেলা ইসুপ গুলের ভুষি ভিজিয়ে খাওয়া। এলোভেরা শরবত পান করা। বদহজম হলে বা পেট ফেপে থাকলে অল্প পরিমাণ গরম পানিতে আদা দিয়ে খাওয়া। অথবা আদা চিবিয়েও খেতে পারেন। বেশিক্ষণ খালি পেটে না থাকা। তেলে ভাজা খাবার খেলে পরিমাণমত পানি পান করা। রান্নায় অতিরিক্ত তেল মশলা না দেয়া।

দইয়ের ব্যবহার গ্যাস্ট্রিক প্রতিরোধ কার্যকরী। কারণ দই থাকা ব্যাকটেরিয়া শরীরের জন্যে উপকারী। তাই নিয়মত দই খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
এছাড়া,হঠাৎ রাতে বা যেকোন সময় তিব্র পেট ব্যথা হলে অ্যান্টাসিড খেয়ে নেয়া। এর পরও যদি সমস্যা থেকে যায়, খাবার সাথে সাথে যদি বমি আসে সে ক্ষেত্রে দেরি না করে ডাক্তার দেখানো।

উপসংহার-

গ্যাস্ট্রিক বর্তমানে সকল বয়সের মানুষের সমস্যা। এর থেকে উদ্ধার পাওয়ার উপায় নিয়মিত খাবার অভ্যাস করা। যে সকল কারণে গ্যাস্ট্রিক হতে পারে সেসব থেকে দূরে থাকা। অর্থাৎ না করা।
সকল রোগের জন্যেই সময় মত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত তাই এই ক্ষেত্রেও দেরি না করা উত্তম।

admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *