জাপান ও চীনে স্কলারশিপ ও উচ্চশিক্ষা (A টু Z) বিস্তারিত

জাপান ও চীনে স্কলারশিপ  ও উচ্চশিক্ষা (A টু Z) বিস্তারিত

জাপান ও চীনের স্কলারশিপ এর কথা এশিয়ার উন্নত দেশ গুলোর কথা আসলে প্রথমেই আমাদের মাথায় আসে। প্রযুক্তি থেকে শুরু করে শিল্প ক্ষেত্রে, কৃষি, শিক্ষাব্যবস্থা,সামরিক সব দিক থেকেই জায়ান্ট হয়ে বিশ্বজোড়া দাপট এই দুটি দেশের। তাই এশিয়ান শিক্ষার্থীদের অন্যতম চাহিদা জাপান ও চীনে উচ্চশিক্ষা। আজকের আলোচনা জাপান, চীনের উচ্চশিক্ষা নিয়ে।

জাপানে কেনো পড়তে যাবেন

জাপান একটি উন্নত সংস্কৃতির দেশ। বলতে গেলে জাপান বিদেশ বান্ধব দেশ! জাপান ক্রমাগত বিদেশী সংস্কৃতি গ্রহণ করে। এর সাথে সাথে তাদের নিজেদের সংস্কৃতির পরিসরও বাড়ে। তাই জাপানে পড়তে গেলে আপনি পরিচিত হতে পারবেন আরো অনেক সংস্কৃতির সাথে। জাপানে শিক্ষা একটি অসাধারণ বিষয়। বরং একে কেবল ক্যারিয়ার সম্পর্কিত না রেখে করা হয়েছে জীবনমুখী, তাই জাপানে পড়তে গেলে আপনি পরিচিত হবেন অনেক গুলো নতুন আদর্শের সাথে। এবং নিতে পারবেন জীবনমুখী শিক্ষা। এখানে প্রযুক্তিগত বিদ্যা শেখার পর গড়তে পারবেন দারুণ ক্যারিয়ার। কারণ কে না জানে ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর শুধুমাত্র শিক্ষা এবং প্রযুক্তির কাঁধে ভর করে জাপান হয়েছে ২য় বৃহত্তম অর্থনৈতিক দেশ! তাই জাপান যদি হয় উচ্চশিক্ষার জন্যে পছন্দ তবে মন্দ হয় না।

জাপানে শিক্ষা ও স্কলারশিপঃ

জাপানের খেলাধুলা,শিক্ষা,প্রযুক্তি ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয় জাপানি বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়তায় স্নাতক,স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি প্রোগ্রামে শিক্ষা বৃত্তি দিয়ে থাকে। সাধারণত প্রতিবছর এপ্রিলে এই স্কলারশিপ দেয়া হয়। জাপানি দূতাবাসে বা সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে এই স্কলারশিপ আবেদন করতে হয়। এছাড়া জাপানে গিয়ে একটু খোঁজ খবর নিলে বা ভালো রেজাল্ট করতে পারলে পেতে পারেন দারুণ বৃত্তি ও সরাসরি অধ্যাপকদের সাথে যোগাযোগ করেও পেতে পারেন স্কলারশিপ। তাছাড়া জাপান পাড়ি জমানোর পর রোটারি,জাপানিক ফাউন্ডেশন সহ কিছু আঞ্চলিক বৃত্তির আবেদন করার সুযোগ আছে।

কি কি শর্ত পূরণ করতে হবেঃ


জাপানে বিদেশি শিক্ষার্থীদেরর জন্যে শর্ত হলো, জাপানি ভাষা, আইএলটিএস বা টোফেল। তবে টোফেল বাধ্যতামূলক নয়। জাপানে আবেদন করতে হলে তাদের সেমিস্টার সম্পর্কে জানতে হবে। এখানে সাধারণত দুই সেমিস্টারে শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর থেকে মার্চ। তবে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ফল সেশনে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর-অক্টোবরেও ভর্তি নিয়ে থাকে। তাই এই সেমিস্টার গুলো দেখে আবেদন করুন ভর্তির। আপনার বিগত শিক্ষা জীবনের সার্টিফিকেট ও ইংরেজি, জাপানিজ ভাষার দক্ষতা সার্টিফিকেট সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে বা সরাসরি কুরিয়ার করে পাঠান।

কি কি পড়তে পারবেন ও খরচ কেমনঃ


এখানে কম বেশি বাংলাদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতই সকল বিষয় পড়ার সুযোগ আছে। তবে আপনি আপনার পছন্দের বিষয়টি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চান তাদের ওখানে পড়ানো হয় কিনা তা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ওয়েব সাইটে দেখে নিতে পারবেন। এখানে সাধারণতঃ

১. পদার্থ বিজ্ঞান
২.গণিত
৩. হিসাব বিজ্ঞান
৪. পরিবেশ বিজ্ঞান
৫. জ্যোর্তিবিজ্ঞান
৬. ফলিত বিজ্ঞান সমূহ
৭. ফ্যাশন ডিজাইনিং
৮.ইঞ্জিনিয়ারিং
৯.ম্যাটেরিয়াল সাইন্স
১০.ন্যানো ম্যাকানিক্স
১১.এডুক্যাশনাল ইনফরমেশন
১২.বায়োলজি ও নিউরোলজি
১৩. মেডিক্যাল সাইন্স সহ প্রযুক্তিগত বিষয়াবলি পড়ার রয়েছে অগাধ সুযোগ।

এখানে বিশ্ববিদ্যালয় অনুযায়ী টিউশন ফী ভিন্ন হয় তাই শিক্ষা খরচ হবে ভিন্ন ভিন্ন।
তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে প্রতিবছর ১০ হাজার ডলার। স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে প্রায় ১২ হাজার ডলার ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে প্রায় ৮ হাজার থেকে ৬২ হাজার ডলারের মত বার্ষরিক খরচ হবে। যারা জাপানি সরকারের স্কলারশিপ নিয়ে যাবেন তারের কোন টিউশন ফী দিতে হয় না।
এছাড়া জাপানে জীবনযাত্রার মান উন্নত ও বেশি তাই কাজের সুযোগ পেলেও তা দীর্ঘক্ষণ করার মানসিকতা নিয়েই যেতে হবে।

চীনঃ পূর্ব এশিয়ার এক বিস্ময় চীন। চীনের বিপুল জনসংখ্যা ও শিল্পের জন্যে বেশ জনপ্রিয় দেশ এখন। চীনের শিক্ষা ব্যবস্থা বর্তমানে এমন অবস্থানে আছে সে চীনে বিদেশি শিক্ষার্থীদের পড়তে যাওয়ার আগ্রহ দিন কে দিন বাড়ছেই। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরও এর ব্যতিক্রম না। বাংলাদেশ থেকেও তাই শিক্ষার্থীরা চীন যায় পড়তে। যেহেতু চীন প্রযুক্তিক জায়ান্ট তাই চীনে প্রযুক্তিগত শিক্ষার ব্যাপক চাহিদা।

কেনো চীনে পড়তে যাবেন-

যেহেতু চীন প্রযুক্তিতে বিস্ময় স্থাপন করেছে তাই চীনে প্রযুক্তিগত বিদ্যা সহ নানা বিষয়ে পড়ে গড়তে পারেন নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যত। এছাড়া চীনে রয়েছে একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারার সংস্কৃতি। এখানে সমাজ, দর্শন? সহ নানা বিষয় পড়ার অন্যান্য সুযোগও রয়েছে। বর্তমানে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে চীনের জনসংখ্যা সংকট ও এক সন্তান নীতির কারণে চীনের শিল্প ক্ষেত্রে জনবলের প্রবল সংকট দেখা দিয়েছে। স্বভাবতই চীন তাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ধরে রাখতে বিদেশিদের সুযোগ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করবে তাই এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে চীনে সুন্দর ক্যারিয়ার গড়তে চীনে পড়তে যেতে পারেন।

কিভাবে পেতে পারেন স্কলারশিপঃ


অন্যান্য বিদেশি স্কলারশিপের মত চীনেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ও দূতাবাসে আবেদন করা যায়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে করাই নিরাপদ এতে সুযোগ বেশি। কারণ দূতাবাসের আবেদনে প্রতিযোগীতা বেশি ও নির্দিষ্টতা আছে। চীনে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্যে যে যে স্কলারশিপ পাওয়া যায় তা হলোঃ

চাইনিজ স্কলারশিপ কাউন্সিল , কনফুসিয়াস স্কলারশিপ, ইয়েস চায়না স্কলারশিপ, এন্টারপ্রাইজ স্কলারশিপ, চায়নিজ লোকাল গর্ভন্টমেন্ট স্কলারশিপ। এছাড়া বেশ ভালো কিছু স্কলারশিপ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটে ভিজিট করলেই খোঁজ পেতে পারেন সহজে। ওয়েবসাইটে ভিজিট করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদা অনুযায়ী আপনার একাডেমিক যোগ্যতার সকল সার্টিফিকেট, ভাষাগত দক্ষতার সার্টিফিকেট,কমপক্ষে ৬ মাস মেয়াদ আছে এমন পাসপোর্ট, ছবি,রিকমেন্ডেশন লেটার অনলাইনে সাবমিট করতে হবে এছাড়া অনেক বিশ্ববিদ্যালয় হার্ডকপিও চায় আবেদনের সময়।

কোন বিষয়ের চাহিদাঃ

উপরোক্ত স্কলারশিপ গুলোর মধ্যে চাইনিজ স্কলারশিপ কাউন্সিলের স্কলারশিপ সহ আরো কিছু সুনির্দিষ্ট স্কলারশিপ শুধুমাত্র প্রযুক্তির সাথে সম্পর্কিত বিষয় গুলোতে দেয়া হয়। তাই যারা প্রযুক্তি নিয়ে পড়ছেন এবং পড়তে চান ভবিষ্যতে, তাদের জন্যে সুবর্ণ সুযোগ।

স্কলারশিপ পাওয়ার শর্তঃ

চীনসহ এশিয়ার দেশ গুলোতে ভালো স্কলারশিপ পাওয়ার সব থেকে ভালো উপায় উক্ত দেশের ভাষা জানা।
কথিত আছে চীনে ইংরেজি শিক্ষক হওয়া সব চেয়ে সহজ। তাহলে আপনি যদি চাইনিজ ভাষা এবং ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জন করতে পারেন সেটি আপনার ক্যারিয়ারের জন্যে কতটা সহায়ক হতে পারে ভাবুন। তাই চীনে ক্যারিয়ার গড়ার, স্কলারশিপ পাওয়ার প্রথম শর্ত চাইনিজ শেখা।

কারণ চীনে আপনি শুধু মাত্র ইংরেজি ব্যবহারের মাধ্যমে খুব একটা সুবিধা নাও পেতে পারেন। তাই স্কলারশিপ পেতে ইংরেজি দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি চাইনিজ ল্যাংগুয়েজ শিখে রাখা, ভালো একাডেমিক রেজাল্ট জরুরি। এছাড়া যারা পিএইচডি প্রোগ্রামে যাবেন তাদের আন্তর্জাতিক জার্নালে দুটি বা একটি প্রবন্ধ অবশ্যই থাকলে স্কলারশিপ পাওয়ার পথ হবে সুগম।

উপসংহারঃ

পরিশেষে কেবল এই বলা যায় এশিয়ার দেশ সমূহের মধ্যে জাপান ও চীনের স্কলারশিপ এবং শিক্ষা ব্যবস্থা সব চেয়ে ভালো তাই এই সব থেকে স্কলারশিপ ও উচ্চশিক্ষার জন্যে নিজের ভালো একাডেমিক রেজাল্ট,IELTS,GRE,TOEFL এ স্কোর থাকতে হবে।

admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *