বিসিএস প্রস্তুতি কিভাবে নিবেন (A টু Z) বিস্তারিত

বিসিএস প্রস্তুতি কিভাবে নিবেন (A টু Z) বিস্তারিত

বিসিএস প্রস্তুতি একটি দীর্ঘ মেয়াদি ব্যাপার। বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন কর্তৃক এই পরীক্ষা নেয়া হয়৷ তিন ধাপে প্রার্থীদের এই পরীক্ষা নেয়া হয়। এবং প্রত্যেকটি ধাপ পরিচালনা করা হয় সর্বোচ্চ সর্তকতার সাথে। প্রথম ধাপ-প্রিলিমিনারি পরীক্ষা যেখানে থাকে এমসিকিউ প্রশ্ন। দ্বিতীয় ধাপ- রিটেন বা লিখিত। যেখানে লিখার মাধ্যমে যোগ্যতা যাচাই করা হয়। আর তৃতীয় ও শেষ ধাপ হয় ভাইবা বা মৌখিক। এই সকল ধাপে এগিয়ে থাকতে কি কি পড়তে হয় এবং কিভাবে বিসিএস প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হয় তা আজ বিস্তারিত আলোচনা করব।

বিসিএস কি এবং কেনো-

BCS- Bangladesh Civil Service . সারাদেশ ব্যাপি মেধাবী এবং যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিসে নিয়োগ দেয়া হয়। যারা ভবিষ্যতে প্রজাতন্ত্রের কাজে নিয়োজিত থাকে। প্রথমেই বলি বিসিএস ক্যাডার হলো প্রথম সারির আমলারা, যারা নিরপেক্ষ ভাবে রাষ্ট্র যন্ত্রের কার্য পরিচালনা করেন। তাই সরকার বদল হলেও চাকরির হেরফের হয় না।

একজন বিসিএস ক্যাডারের পদমর্যাদা যেহেতু প্রথম শ্রেণির সেহেতু তিনি প্রথম শ্রেণির সম্মানিই পেয়ে থাকেন। এখন পর্যন্ত বিসিএসে কোন রকম ঘুষ দূর্নীতি ব্যতিত স্বচ্ছ নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হয়। তাই সারাদেশের চাকরি প্রার্থীদের অন্যতম চাহিদা বিসিএস ক্যাডার হওয়া। তাই অনেক শিক্ষার্থী বিসিএস প্রস্তুতি নিয়ে জানতে আগ্রহী।

ক্যাডার কি এবং কতটি ক্যাডার রয়েছে-

ক্যাডার বলতে প্রজাতন্ত্রের কাজে নিয়জিত প্রথম শ্রেণির আমলাদের বোঝানো হয় তা আগেই বলেছি। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ৪২ টি বিসিএস নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠীত হয়েছে। এই পরীক্ষা গুলোতে পাশকৃত প্রার্থীরাই প্রজাতন্ত্রের কাজ করে আসছে। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে মোট ক্যাডার সংখ্যা ২৬টি। যেখানের ১৪টি সাধারণ এবং বাকি ১২টি কারিগরি বা পেশাগত ক্যাডার রয়েছে।

কিভাবে বিসিএস প্রস্তুতি নিবেন-

বিসিএস প্রস্তুতি এক মাস কিংবা দুই মাসের নয় বরং একটি দীর্ঘ মেয়াদি প্রক্রিয়া। কারণ, বিসিএস নিয়োগের ব্যাপারটিও একটি দীর্ঘ মেয়াদি প্রক্রিয়া। তাই আলাদা আলাদা করে প্রত্যেকটি ধাপের জন্যে আলাদা প্রস্তুতির ব্যাপার জড়িত।
এবার আলোচনা করব তা নিয়ে।

প্রথমতঃ

বিসিএস প্রস্তুতি এর প্রথম ধাপ প্রিলির প্রস্তুতি। প্রিলিতে মোট ২০০ মার্কের পরীক্ষা। যেখানে প্রতিটি বিষয়ের নির্দিষ্ট সংখ্যা এমসিকিউ আপনাকে দাগাতে হবে। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্যে .৫ মোট প্রাপ্ত নাম্বার থেকে কেটে নেয়া হয়। অর্থাৎ বিসিএস প্রিলিতে নেগেটিভ মার্কিং রয়েছে।

প্রিলির প্রস্তুতির জন্যে প্রথমেই প্রিলির সিলেবাসটি দেখে নিন কি কি পড়তে হবে। বিষয় সম্পর্কে একটি ধারণা নিয়ে নিন। এবার বিষয় ভিত্তিক বই পড়া শুরু করুন। অনেকেই অনেক বই কিনে হ য ব র ল করে ফেলেন। তা না করে নির্দিষ্ট একটি বই থেকে পড়াই ভালো। বা যে কোন একটি পাবলিসার্স এর সিরিজ ভিত্তিক বই পড়াই ভালো।

প্রিলির জন্যে ওরাকল বা এম্পি থ্রি সিরিজের বই নিতে পারেন। অথবা আরো আছে অ্যাসিওরেন্স এবং প্রফেসরসের সিরিজ বই। বাজারে প্রত্যেক বিষয়ের একটি করে বই আপনি পেয়ে যাবেন। ইংরেজির জন্যে মাস্টার বইটি অনুসরণ করতে পারেন। কমন মিস্টেক ইন ইংলিশ বইটিও বেশ ভালো। বাংলা প্রস্তুতির জন্যে শুধু মাত্র সিরিজের বই ফলো না করে নবম দশম শ্রেণীর বাংলা ২য় পত্র গ্রামার বইটি পড়তে পারেন। সবার আগে বলি বিসিএস প্রস্তুতি এর জন্যে বেসিক ঠিক করা খুবই জরুরি। গণিতের জন্যে তাই শর্টকাট ম্যাথডে যাওয়ার আগে ৬-১০ শ্রেণির গণিত বই গুলো শেষ করুন। ভৌগোল ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয় এর প্রশ্নের জন্যে নবম-দশম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ বইটি পড়ুন। এছাড়া পড়তে পারেন পৌরনীতি ও ইতিহাস বই গুলো।

প্রতিদিন ৮-১২ ঘন্টা মেয়াদি নিয়মিত অধ্যায়নের মাধ্যমে ৬-৭ মাসে প্রিলির জন্যে ভালো প্রস্তুতি সম্পন্ন করা সম্ভব। তবে যদি আপনার বেসিক ভালো থাকে।

দ্বিতীয়তঃ

বিসিএস প্রস্তুতি এর জন্যে বিস্তারিত পড়া খুবই জরুরি। তবে আপনি শুধু মাত্র প্রিলির জন্যে প্রস্তুতি নিয়ে থাকলে বিস্তারিত পড়তে গেলে পড়ার সমুদ্রে হারিয়ে যাবেন। তাই লিখিত পরীক্ষায় বসার আগে যেকোন বিষয়ের বিস্তারিত পড়তে হবে। যেহেতু বিসিএস পরীক্ষায় প্রিলির পাওয়া নম্বর যোগ হয় না। কেবল পাস করলেই হয়। তাই পরবর্তী পরীক্ষা গুলোই আসল পরীক্ষা।

তাই সে অনুযায়ী বই পত্র নিয়ে নিয়মিত পড়া আরম্ভ করতে হবে। বিসিএস প্রস্তুতি নিতে গেলে সব থেকে জরুরি জেনে রাখা যে, কিছুদিন পড়ে আর কিছুদিন না পড়লে আপনি পড়ার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারবেন না। তাই নিয়মিত পড়ার ব্যাপারটি অভ্যাস করে নিতে হবে। আপনি হয়তো ভাবছেন মাত্র ২০০ মার্কের পরীক্ষা দুই তিন মাসেই পড়ে কাভার দিবেন। কিন্তু না, এটি আপনার ভুল ধারণা। অনেকে ৫/৬ বার চেষ্টা করেও ক্যাডার হতে পারে না এমন নজিরও আছে। তাই পড়াকে অভ্যাসে পরিণত করে আগাতে হবে। বাজারে পাওয়া যায় এমন কিছু মডেল টেস্ট কিনতে হবে। এবং পড়ার পাশাপাশি এমসিকিউ পরীক্ষা অনুশীলন করতে হবে ঘড়ি ধরে। এতে আপনি টাইম ম্যানেজমেন্ট এর একটি ভালো ধারণা আয়ত্ত করবেন।

তৃতীয়তঃ

কথিত আছে আকবর যুদ্ধে যাওয়ার আগে যুদ্ধের ময়দান আগে থেকে বার বার পরিদর্শন করতেন। এতে যুদ্ধে হার জিতের ভালো ধারণা হতো। বিসিএস একটি যুদ্ধ। যে যুদ্ধ নির্ধারণ করে দিবে আগামী জীবন আপনার কেমন যাচ্ছে। তাই এই যুদ্ধে নামার আগে যুদ্ধ স্থান অর্থাৎ প্রশ্ন পত্র এনালাইসিস করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন।

বিসিএসে বসার আগে প্রশ্ন পত্রের উপর ভালো ধারণা নিয়ে বসতে হয়। তাই বিগত বছরের প্রশ্ন ব্যাংক পড়তে হবে। তাহলে প্রশ্নের ধরণ সম্পর্কে ভালো ধারণা হবে। বিগত বছরের প্রশ্ন ব্যাংক হিসেবে ওরাকল, অ্যাসিওরেন্স, প্রফেসরস এর প্রশ্ন ব্যাংক পড়তে পারেন। প্রতিবার প্রিলিতে বিগত বছরের প্রশ্ন থেকে পূনরায় আসে। তাই বিসিএস এর নতুন সিলেবাস অনুযায়ী অন্তত ৩৫-৪৩ তম বিসিএস এর প্রিলির প্রশ্ন ব্যাখ্যা সহ পড়ুন।

অন্যান্য বিষয়ঃ

বিসিএস প্রিলির নম্বর মূল পরীক্ষার সাথে যোগ হয় না তা আগেই বলেছি। এমসিকিউ পরীক্ষায় তাই ১২০ পাওয়া নিরাপদ। এছাড়া বিশেষ বিসিএস এ শুধু প্রিলি আর ভাইবার মাধ্যমে ক্যাডার নিয়োগ দেয়া হয়। আর সাধারণ বিসিএস এ প্রিলি-রিটেন-ভাইবা হয়ে থাকে।

বিসিএসের জন্যে সাম্প্রতিক বিষয়াবলি গুরুত্বপূর্ণ। তাই নিয়মিত পত্রিকা পড়ার অভ্যাস করুন। যাদের পত্রিকা পড়ার অভ্যাস নেই তারা মাসিক কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পড়ে নিতে পারেন। মনে রাখবেন এখন প্রতিযোগিতা বেশি তাই আপনি বেশি পড়া মানে এগিয়ে থাকা।

সবার পড়ার ধরণ একরকম হয় না। একজনের প্রস্তুতির সাথে অন্যের না মিলাই স্বাভাবিক। কিন্তু কিছু ব্যাপার একি রকম হয়ে থাকে। যে যত টেকনিক আর কার্যকরি উপায়ে প্রস্তুতি নিবে সে এগিয়ে থাকবে। কারণ এখনকার বিসিএস এ কেবল গতানুগতিক বই পড়ে এগিয়ে থাকা যায় না।

উপসংহারঃ

ক্যাডার হওয়া অনেকেরই স্বপ্ন। মূলত ক্যাডার হওয়ার প্রথম কথা লেগে থাকতে হবে। যে যত বেশি সময় প্রস্তুতির জন্যে দিবে তার স্বপ্ন পূরণ তত সহজ হবে। যেহেতু এই একটি পরীক্ষাতেই আপনার ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক মর্যাদা যেমন বাড়বে তেমনি নিশ্চিত হবে আগামির দিন গুলো। তাই নিজের স্বপ্ন পূরণে ঝাপিয়ে পড়ুন ও সফল হোন। সবার জন্যে রইল শুভকামনা।

admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *