মানসিক অশান্তি দূর করতে যা করণীয়।

মানসিক অশান্তি দূর করতে যা করণীয়।

মানসিক শান্তি দৈহিক সুস্বাস্থ্যের সাথে সাথে নিশ্চিত করা মানুষের জন্যে খুবই জরুরি বিষয়। কেনো না আপনার মন আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করে। মনের অস্তিত্ব প্রমাণিত না হলেও বিজ্ঞানীরা একে হরমোনের প্রভাব বলে থাকেন। মূলত ব্রেইনই আমাদের সকল কিছু নিয়ন্ত্রণ করে। এই সামগ্রিক ব্যাপার সমূহকেই আমরা এই আর্টিকেলে মানসিক নামে অবিহিত করব। এবং আলোচনা করবো কিভাবে নিজের মানসিক শান্তি নিশ্চিত করা যায়।

মানসিক শান্তি না থাকার কারণঃ

বর্তমানে আমরা খুব বেশি অন্যের প্রতি মনোযোগী, যার কারণে একটা সময় নিজের অস্তিত্বের জানান দিতে গিয়ে আমরা নিজেকে আর খুঁজে পাই না। তাই সর্বপরি নিজের দিকেই মনোযোগ দেওয়া উচিৎ। দেখুন এটা কিন্তু সময়েরই দোষ বলা যায়, আবার সাইকোলজির সাথেও এটি কিছুটা জড়িত অবশ্যই।  এই সময়টাই কেমন জানি শো অফের। আমি কি পারি, আমি কি করি, আমি কি চাই তা দেখিয়ে বেড়ানোর। সেটা অফলাইনে হোক কিংবা অনলাইনে। এই যে অন্যকে নিজের সাফল্য দেখানোর যে প্রবণতা, এটার সার্থক প্রয়োগ মানুষকে তৃপ্তি দেয়। তাই দিনের বেশিরভাগ সময় প্রোডাক্টিভ কাজ না করে অন্যকে দেখি বেড়ায় নিজেকে। যে ব্যক্তির নিজের মানসিক শান্তিতেই ব্যঘাত ঘটায়।

মানসিক শান্তিতে কিভাবে ইগো প্রভাব রাখেঃ 

নিজেকে দেখিয়ে বেড়ানো, ইগো কিভাবে আমাদের আঘাত করে?
আপনি মানুষকে দেখিয়ে বেড়ালে সমস্যা কি? সমস্যা হলো যখন মানুষ আর দেখেও দেখছে না! কারণ সবাই দেখানোতেই তো ব্যস্ত। তাই অন্যেরটার গুরুত্ব বেশিরভাগ সময় কম থাকবে তার কাছে।  কেবল যা কিছু তার ‘নিজেকে’ আনন্দ দিবে তাই সে গ্রহণ করবে। আপনি আমি আমরা নিজেদের জায়গা থেকে ভাবলেই বুঝতে পারব,কয়টা হেইট কমেন্ট, কটু কথা আমরা গ্রহণ করি? আমরা প্রসংশার কাঙ্গাল।
তাই নিজের জায়গাটা মনে মনে ছেড়ে অন্যদের জায়গায় নিজেকে বসিয়ে ভাবুন ঠিক কতটুকু গুরুত্ব আপনি বহন করেন এই বিশাল পৃথিবীতে? আপনার অস্তিত্ব প্রকৃত পক্ষেই কোথায় কোথায় মানে রাখে? খুব বেশি গুরুত্ব আপনাকে কোথায় দিতে হবে? নিজের পড়াশোনা-ক্যারিয়ারে নাকি আপনি কি করছেন তা মানুষকে দেখিয়ে বেড়ানোতে?

যেভাবে মানসিক স্বস্তি আনবেনঃ

যখন আপনি বুঝবেন জীবনটা দেখিয়ে বেড়িয়ে,বা অন্যের ব্যাপারে অযথা মাথা ঘামানোর থেকেও বড় কিছু। যখন নিজেকে গুরুত্ব দিবেন,নিজেকে গড়বেন,নিজেকে উপভোগ করবেন, নিজকেই সময় দিবেন তখন দেখবেন আপনার দিকে এম্নিতেই ফোকাস আসছে। জোর করে এটেনশন নিতে হবে না। এই প্রবণতা আমাদের জেনারেশনে খুব কাজ করে, তাই চার দিকে এত হতাশা, একাকিত্ব। কারণ সবাই পর্যাপ্ত এটেনশন পায় না!

কেনো আমরা অন্যের ব্যাপারে কম যত্নশীলঃ

এটাই প্রকৃতির নিয়ম সবাই সমান এটেনশন পাবে না। আপনি সবাইকে খুশি কখনোই করতে পারবেন না,আপনার পরিবার,আত্নীয়-স্বজন, বন্ধুমহল বা সমাজে এমন লোকের সংখ্যাই বরং বেশি থাকবে যারা কোন কারণ ছাড়াও আপনাকে অপছন্দ করতে পারে। সেসব মানিয়ে চলতে হবে,এড়িয়ে যেতে হবে। খুব বেশি গুরুত্ব দিয়ে ফেললে মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে৷ আর তা আপনারই মানসিক শান্তিতে আঘাত আনবে অন্য কারো না৷ কেনো আপনার সাথে অন্য কারো একে বারেই হুবহু মিলবে না? কারণ আপনি একি লেখকের  লিখা অন্য ধরণের একটা বই৷ কখনো দেখেছেন একি লেখক একি রকম দুটি বই লিখে? কিছুটা মিলে যেতেও পারে,প্লট মিলবে কিন্তু শেষটা একি নাও হতে পারে!

আবার শেষটা এক হয়ে পারিপার্শ্বিক ঘটনা প্রবাহ ভিন্ন হতে পারে৷ তাই কারো সাথে নিজের সামান্য মিললেও পুরোটা মিলাতে যাবেন না। আপনি আলাদা এবং একান্ত নিজের। নিজেকে যত শক্ত মানসিক,আর্থিক ভিতের উপর দাঁড় করাতে পারবেন দেখবেন আস্তে আস্তে অন্য বিষয় গুলোও ঠিক হয়ে আসবে। নিজের যত্ন নিন, দিন শেষে আপনার কষ্ট আপনিই অনুভব করতে পারবেন এবং সে অনুযায়ী কি করণীয় বুঝবেন। কেনো না খুব কম মানুষকেই আমরা দেখতে পাই কোথাও সামান্য আগুন জ্বলতে দেখে তাতে পানি দিয়ে নিবাতে সাহায্য করে বরং আশপাশ হতে খড়কুটো এনে আগুন বাড়িয়ে দেয়!
তাই নিজের আগুন নিজে নিবান। অন্য কারো উপর খুব ভরসা করবেন না। কেউ কারো না,সবাই নিজেরটাই ভাবছে। আপনিও আপনারটাই ভাবুন। সময় সুযোগ সামর্থ্য থাকলে অন্যের উপকার করুন। ছোট্ট এই জীবনে কোন আফসোস নিয়ে থাকবেন না।

দায়িত্ব গ্রহণঃ

ভালো থাকার মূলমন্ত্র যদি ভালো রাখা? হ্যাঁ তাই। অন্যকে ভালো রাখার মধ্যে আনন্দ পাবেন। নিঃস্বার্থ ভাবে যখন কারো উপকার করবেন। পরিবারের জন্যে খাটবেন। পরিবারের দায়িত্ব নিবেন। অথবা দেশ বা সমাজের কাজে লাগে এমন কোন দায়িত্ব নিবেন তখনি আপনি জীবনের একটা মানে খুঁজে পাবেন। আপনাকে আঁকড়ে ধরে যখন মানুষ বাঁচার আশা খুঁজে পাবে।  নিজেদের স্বপ্ন নির্মাণে সহযোগীতা পাবে তখন আপনি আর জটিলতায় ভুগবেন না।

ধর্মীয় কাজে অংশ নেওয়াঃ

পৃথিবীতে ধর্মের ধারণা এসেছে মানসিক শান্তি খুঁজে নেয়ার উদ্দেশ্যেই। আপনি খেয়াল করবেন যখন আপনি সৃষ্টিকর্তার কাছে নত হবেন তখন আপনার মাঝে তৃপ্তি ফিরে আসবে। কারণ আমাদের সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই হলো আমরা যাতে সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকি এবং তার ফরিয়াদ করি। তিনি আমাদের প্রতিটি মূহুর্তে রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকেন৷ তাই তার দেয়া আশীর্বাদ গ্রহণ করতে মাথা নত করতে কখনোও কার্পণ্য করবেন না। সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা আপনার জীবনে পরম মানসিক শান্তি এনে দিবে।

ভুল মানুষ থেকে দূরে থাকাঃ

আমরা অনেক সময় এমন সমাজ পরিবারে বাস করি যেখানে বেশ কিছু মানুষ থাকে যারা আমাদের মানসিক শান্তি নষ্ট করে। সব সময় নেগেটিভ কথা শোনায়।  তাই যখনই এমন মানুষ আসবে জীবনে তখনই তাদের এড়িয়ে যাবেন। তাদের কথা কানে নিবেন না। সম্ভব হলে জীবন থেকে তাদের সরিয়ে দিবেন। যতটুকু সম্ভব এসব মানুষ হতে দূরে থাকবেন।

শরীর চর্চা করাঃ

আগেই বলেছি মন ও শরীর একে অন্যের পরিপূরক। তাই একটি খারাপ হলে অন্যটিতে শান্তি পাওয়া যায় না। আপনার মানসিক শান্তি আনতে হলে আপনাকে সর্বপরি নিজের দিকেই ফোকাস করতে হবে। যার মধ্যে হলো শরীরের যত্নও নেয়া। আপনার শরীরের যত্ন নিন। নিয়মিত শরীর চর্চা করুন। সেটা হতে পারে জীমে কিংবা বাসায় নিজর চেষ্টায়। আপনাকে যে ভার উত্তোলনের মত ভারী কোন  ব্যায়াম করতে হবে এমনও নয়। নিয়মিত হাক্লা দৌঁড়ানো কিংবা হাঁটা আপনাকে চনমনে করে তুলবে। নিজের দিকে ফোকাস দিলে নিজের পরিবর্তন দেখলে আপনার নিজেরই ভালো লাগা কাজ করবে। তৃপ্তি আসবে৷

ছাত্র বয়সে মানসিক শান্তিঃ

আপনি হয় তো এখন ছাত্র। বর্তমানে ছাত্রদের আত্নহত্যার পরিমাণ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্রদের মধ্যে ক্যারিয়ার জড়িলতা সহ নানা কারণে হতাশা দেখা দিচ্ছে। যা তরুম সমাজকে ঠ্যালে দিচ্ছে আত্নহত্যার দিকে। আসলেই এই সময় নিজেকে ও মানসিক অবস্থা ঠিক রাখতে আমাদের সংগ্রাম করতে হয়। পারিবারিক নানা জটিলতা, ক্যারিয়ার চিন্তা আমাদের তাড়া করে। এই সময়ে মনে রাখা জরুরি জীবন দেখার মত খুব বেশি বয়স এখনো আপনার হয় নি। খুব বেশি তাড়াহুড়ো করছেন কিনা একবার ভেবে দেখুন!  চাইলেই আস্তে ধীরে এগুনের মাধ্যমে জীবনকে আরেকটু উপভোগ্য করা যায় কিনা। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সব চেয়ে জরুরি নিজের ক্যারিয়ার প্ল্যান করে নেওয়া। এবং সে অনুযায়ী এগিয়ে যাওয়া। আপনি আর্থিক ভাবে মা-বাবার উপর নির্ভরশীল হলেও চেষ্টা করুন নিজে টুকটাক আয় করার। মনে রাখবেন আপনার জীবনে আপনি ছাড়া আর কেউ গুরুত্বপূর্ণ না একটা পর্যায় পর্যন্ত। যখন আপনি নিজেকে গড়ে নিবেন। প্রতিষ্ঠিত করবেন তখন ঠিকই সব আপনার হাতে আপনা আপনি ধরা দিবে। তাই হতাশ না হয়ে লড়ে যান।

উপসংহারঃ


জীবন কখনো একরকম লাগে না এটা মাথায় রাখা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যে ভালো। আজকে হয় তো খারাপ লাগছে কাল আবার ভালোও লাগবে। কখনোই হতাশ হওয়া উচিত নয় তাই। সংগ্রাম করেই যেতে হয়। সংগ্রাম থেকে সুন্দর কিছু পৃথিবীতে আর হয় না।

admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *