ইসলামী ব্যাংক লোন পদ্ধতি।
বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক লোন নিয়ে আজকের আলোচনা। শরীয়ত মোতাবেক এই ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালিত হয় বলে মুসলিম প্রধান দেশ হওয়ায় ইসলামী ব্যাংকের গ্রহণযোগ্যতা সর্বস্তরের মানুষের কাছে তুলনামূলক বেশি। বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন উঠায় সরকারি নজরদারিতে এসেছে ব্যাংক গুলো।
স্বপ্নপূরণে মানুষ কি না করে। যার মধ্যে অন্যতম হলো ঋণ গ্রহণ। স্বপ্নের বাড়ি নির্মাণ ,স্বপ্নের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উন্নতির জন্যে নানা সময় আমরা লোন নিয়ে থাকি। এবং তা যদি হয় ইসলামীক উপায়ে ইসলামী ব্যাংক থেকে তাহলে কথাই আলাদা। কারণ গতানুগতিক ব্যাংক থেকে ইসলামী ব্যাংকের অনেক নীতিমালাই আলাদা। হ্যাঁ, ইসলামী ব্যাংক লোন অন্যান্য ব্যাংকের লোন পদ্ধতি থেকে আলাদা। বিশেষ করে সুদের প্রচলন হওয়ার পর থেকে ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে মানুষ নিঃস্ব হতেও দেখা গেছে। বিশেষ করে পূর্বে কৃষক সমাজ মহাজন,জমিদার থেকে
ঋণ নিয়ে নিজের সব কিছু হারাতো। সমাজের অর্থনৈতিক অবস্থা যত পরিবর্তন হতে লাগলো তত ঋণ গ্রহণ ও প্রদানেও এসেছে পরিবর্তন। যার অন্যতম উদাহরণ ইসলামী ব্যাংক লোন। ইসলামিক পদ্ধতিতে এই ব্যাংক পরিচালনা হয় তা আমরা সবাই জানি। “আল্লাহ ব্যবসাকে করেছেন হালাল ও সুদ কে হারাম।” এই প্রতিপাদ্য নিয়ে ইসলামী ব্যাংক তার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তাই বর্তমানে জনগণের অন্যতম ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যাংকটির লোন গ্রহণ করা।
তাই সেই স্বপ্ন পূরণ করতে মনের ইচ্ছেকে পরিপূর্ণতা দিতে মানুষ যা সম্ভব তাই করে। আমাদের সকলেরই মনে মনে ইচ্ছে থাকে স্বপ্নের বাড়ির। নিয়ম অনুযায়ী আপনার আমার সহযোগীতায় ইসলামী ব্যাংক তাই হাউজ লোন দিয়ে থাকে। আপনি হয় তো চাকরি ছেড়ে মনোনিবেশ করেছেন ব্যবসায়। কিন্তু পুঁজি বিনিয়োগে হিমশিম খাচ্ছেন। আপনার ব্যবসায় সহযোগীতা করতে লোন দিয়ে পাশে দাঁড়াবে ইসলামী ব্যাংক। তাই আজ আলোচনা করব ইসলামী ব্যাংকের লোন নীতিমালা ও ধরণ নিয়ে।
ইসলামী ব্যাংক লোন এর ধরণঃ
ইসলামী ব্যাংক লোন পদ্ধতি বলতে ইসলামী ব্যাংক কর্তৃক প্রদানকৃত বিভিন্ন রকম লোনের কথা বলছি।
অন্যান্য ব্যাংকের মত এখানে রয়েছে নানা রকমের লোন। ইসলামী ব্যাংক লোন গুলো হলোঃ
১. শিল্পখাত উন্নায়ণ লোন।
২.হাউজ লোন
৩.ব্যবসায়ে উন্নতি করার লোন
৪.কৃষি লোন
৫. ফ্রিল্যান্সিং লোন
৬. রিয়েলস্টেট বিজন্যাস লোন।
উক্ত লোন গুলি গ্রহণের নানা নীতিমালা রয়েছে। যা ইসলামী ব্যাংক কর্তৃক সুস্পষ্ট ভাবে বর্ণিত। আপনি যদি আপনার স্বপ্ন পূরণে সুস্থ ঋণ পদ্ধতি অনুসরণ করতে চান তবে এই নীতিমালা গুলো বা শর্ত গুলো পূরণ করে ঋণ গ্রহণ করতে পারেন।
ইসলামী ব্যাংক লোন (হাউজ)ঃ
আপনি যদি ইসলামী ব্যাংক হতে বাড়ি নির্মাণের জন্যে অথবা সংস্কারের জন্যে লোন নিতে চান তবে আপনাকে অন্তত দুইজন সচ্ছল ব্যক্তিকে গ্যারান্টার করতে হবে। পুরাতন বাড়ি সংরক্ষণ করতে চাইলে আপনি ইসলামী ব্যাংক থেকে ১০ লক্ষ পর্যন্ত। এবং নতুন বাড়ি নির্মাণের জন্যে ৩০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ গ্রহণের সুবিধা পাবেন।ইসলামী ব্যাংক লোন এর মাধ্যমে হাউজ লোন বেশ জনপ্রিয়।
হাউজ লোনের জন্যে আপনার যেসকল জরুরি শর্ত পূরণ করতে হবে- আপনার যদি নিজস্ব মালিকানার বাড়ি হয়ে থাকে তবে আপনিঃ
১.সিএস,এস এ,বি এস খতিয়ান দেখাতে হবে।
২. বায়া দলিল প্রদর্শন করতে হবে।
৩. এনইসি দেখাতে হবে।
৪. ডিসি আর, নামজারী রশিদ ও খতিয়ান।
শিল্পখাত উন্নায়ণে ইসলামী ব্যাংক লোনঃ
বাংলাদেশ বর্তমানে শিল্প বিপ্লবের পথে হাঁটছে। আর এই পথে বাংলাদেশের শিল্প খাতে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংক সাহায্য করছে। যার মধ্যে অন্যতম হলো ইসলামী ব্যাংক। দেশের শিল্প খাত উন্নায়ণে নতুন উদ্দোক্তা প্রয়োজন,আর উদ্দোক্তাদের ঋণ দিয়ে উৎসাহ দিচ্ছে ইসলামী ব্যাংক। কারণ শিল্প উন্নায়ণ মানেই দেশের উন্নায়ণ। শিল্প খাত উন্নায়ণে অবদান রাখছে ইসলামী ব্যাংক।
শিল্প ঋণ এস এম ই লোড গ্রহণ করতে পারেন ইসলামী ব্যাংক থেকে।
গ্রহণের শর্ত সমূহ হলো-
আপনি যে ব্যবসা করেন তার ট্রেড লাইসেন্স।
এন আই ডি কার্ড। ও ব্যাংক কর্তৃক চাওয়া প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র।
কৃষি ইসলামী ব্যাংক লোনঃ
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক একসময় তুমুল জনপ্রিয় ছিল কৃষকদের ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে। কিন্তু বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকও এই ক্ষেত্রে একধাপ এগিয়ে। একটি দেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তি নিহিত থাকে কৃষি ক্ষেত্রে। তাই এর উন্নায়ণে সরকারি বেসরকারি সকল সংস্থার অবদান থাকতে হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রধান পেশা কৃষি।
যেহেতু উন্নত প্রযুক্তির কারণে বর্তমানে শিক্ষিত উদ্দোক্তারাও এখন কৃষি খাতের দিকে আগাচ্ছে তাই প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষ সম্প্রসারণের জন্যে ভাবে প্রদান করা হচ্ছে। এই ঋণ গ্রহণে যে সকল কাগজপত্রের প্রয়োজন হয় তা হলো-
এন আইডি কার্ড। যে জমির জন্যে ঋণ গ্রহণ করতে চান তার কাগজপত্র। অন্যদিকে যে বিশেষ ক্ষেত্রে কৃষি বিনিয়োগ করতে চান তার অভিজ্ঞতা প্রদর্শন। যেমনঃ মাশরুম চাষ,বিশেষ শষ্য চাষ ইত্যাদি।
ফ্রিল্যান্সিং ইসলামী ব্যাংক লোনঃ
প্রায় দুই বছরের মধ্যে ঋণ প্রদানের সু্যোগ প্রদানের মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংক তরুণ প্রজন্মের নতুন পেশা ফ্রিল্যান্সিং এর উপর দিচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং লোন। বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তরুণদের মাঝে। আর এই ক্ষেত্রে বিনিয়োগের এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কিনতে সহায়তা করতে ঋণ প্রদান করে ইসলামী ব্যাংক যা ফ্রিল্যান্সিং লোন নামে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
ফ্রিল্যান্সিং লোন এর জন্যে আপনার যা যা কাগজপত্র প্রয়োজন হবে তা হলো-
অবশ্যই ইসলামী ব্যাংকে একাউন্ট থাকতে হবে। স্থাবর সমত্তির দলিল যার বাজার মূল্য কমপক্ষে ১ লক্ষ টাকা ও প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র। এছাড়া ফ্রিল্যান্সিং লাইসেন্স এর প্রমাণাদি থাকলে তা।
রিয়েলস্টেট বিজন্যাস ইসলামী ব্যাংক লোনঃ
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ব্যবসা ক্ষেত্রে নানা ব্যবসার উদ্ভব হয়েছে যার মধ্যে লাভজনক জনপ্রিয় ব্যবসা হলো রিয়েলস্টেট ব্যবসা। এই ব্যবসার নতুন দিক সূচিত হচ্ছে। যার ফলে ব্যাংক গুলো এই খাতে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করেছে। যাতে আপনি আপনার রিয়েলস্টেট ব্যবসা সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশের ব্যবসা খাতে উন্নতি করতে পারে।
ইসলামী ব্যাংক লোন গ্রহণে আপনার যে সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রয়োজন হবে তাহলো-
ইসলামী ব্যাংকে একটি একাউন্ট থাকতে হবে। ব্যবসা সংক্রান্ত এবং ব্যবসায়ের অংশিদারগণের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। জমি সংক্রান্ত দলিল।
ব্যবসায় ইসলামী ব্যাংক লোনঃ
ব্যবসা ক্ষেত্রে বিপ্লব সাধিত হচ্ছে বাংলাদেশে। উদ্দোক্তাদের অবদান বর্তমানে অনস্বীকার্য। তাই এই উদ্দোক্তাদের ব্যবসা বিন্যাসে সহায়তা করছে ইসলামী ব্যাংক। আপনার ব্যবসায় উন্নতি করতে ব্যবসা ইসলামী ব্যাংক লোন নিতে পারেন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র-
আপনার ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানের দলিল প্রদর্শন করতে হবে। আপনার ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স দেখাতে হবে। ইসলামী ব্যাংকে আপনার একটি একাউন্ট ও এন আই ডি।
উপসংহারঃ
দেশের সার্বিক উন্নায়ণে অবদান রাখে ব্যাংক গুলো। দেশের শীর্ষ স্থানীয় ব্যাংক এর তালিকায় রয়েছে ইসলামী ব্যাংক। উক্ত ব্যাংকটি ঋণ প্রদানের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নায়ণে সহায়তা করছে। ইসলামী ব্যাংকের ঋণ প্রদান নীতিমালা অন্যান্য ব্যাংক হতে আলাদা কারণ তারা তাদের প্রতিষ্ঠানকে সুদ মুক্ত বলে দাবি করে। তাই ইসলামী পদ্ধতি অনুসরণ করে ঋণ গ্রহণ করতে চাইলে নিতে পারেন ইসলামী ব্যাংক লোন।