পড়ায় মনোযোগ ধরে রাখার ও মুখস্ত করার উপায় সমূহ

পড়ায় মনোযোগ ধরে রাখার ও মুখস্ত করার উপায় সমূহ

বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়ায় মনোযোগ না থাকা একটা সাধারণ সমস্যা।

আবার অনেকেই খুব সহজে কিছু মুখস্ত করতে পারে না, করলে আবার তা ভুলে যায়। আসলে আমাদের পড়াশোনা থেকে শুরু করে সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সাথে জড়িত আমাদের দৈন্দিন রুটিন,শারীরিক ও মানসিক বিষয়।

আমাদের জীবন-যাপন প্রণালী যেমন হবে আমরা তেমন পড়তে, কোন কাজে মনোযোগ দিতে ও দীর্ঘক্ষণ কিছু মনে রাখতে সক্ষম হবো। তাই কিভাবে মনোযোগ ফিরিয়ে আনব ও কোন কিছু মুখস্থ রাখার উপায় নিয়ে আজ আলোচনা করব৷

পড়ায় মনযোগ ধরে রাখার উপায়
পড়ায় মনযোগ ধরে রাখার উপায়

কম সময় পড়তে বসা

কি অবাক হচ্ছেন? হ্যাঁ পড়ায় মনোযোগ ফিরিয়ে আনতে শুরুতে কম কম পড়তে বসতে হবে। ধরুন আপনি এই করোনা মহামারী কালে দীর্ঘ ১৫/১৬ মাস কোন পড়াশোনা করেননি এখন আর পড়ায় কিছুতেই মনোযোগ আনতে পারছেন না।

কারণ হলো দীর্ঘদিন পড়াশোনা না করায় মন পড়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। আসলে দীর্ঘদিন আপনি পড়াশোনার সাথে সম্পৃক্ত না থাকায় আপনার মস্তিষ্ক পড়ার প্রয়োজনীয়তা ভুলে গিয়েছে।

তাই মস্তিষ্ককে পড়ায় অভ্যাস্ত করতে পুরোনো অভ্যাস ফিরিয়ে আনতে প্রতিদিন নিয়ম করে পড়তে বসতে হবে অন্তত কম সময়ের জন্যে হলেও। কারণ আপনার মস্তিষ্ক যেমন একদিনে পড়ার প্রতি অমনোযোগী হয় নি তেমনি একদিনে মনোযোগীও হবে না।

তাই যখন আপনি নিয়ম করে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে পড়তে বসবেন তখন মস্তিষ্ক বুঝবে এটি প্রয়োজনীয় কাজ তাই প্রতিদিন করা হচ্ছে।

প্রথম দিন ১৫ মিনিট বসলে ঘড়ি ধরে তা পরের দিন ২০ মিনিট করুন। এবং প্রতিদিন এভাবে সময় বাড়ান।

একসময় দেখবেন দীর্ঘক্ষণ পড়ার অভ্যাস হয়ে যাবে। আবার প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে পড়তে বসলে অই একি সময়ে পড়া অভ্যাস হবে। তাই পড়ার অভ্যাস ফিরিয়ে আনতে অল্প অল্প সময় ধরে পড়তে বসুন৷

রুটিন করুন~~

জানি এখন অনেকের এই লিখাটা পড়া থেকে মন উঠে যাবে! কারণ রুটিন মানা আমাদের অনেকের পক্ষেই সম্ভব না। খুব বেশি দিন কি আপনি এক রুটিনে থাকতে পারেন না? বিরক্তি এসে যায়? আপনি যদি স্বেচ্ছাচারী হোন তবে আপনার এমনই লাগার কথা।

কিন্তু চিন্তার কোন কারণ নেই। আপনি ১ মাস বা ১ বছরের রুটিন নিশ্চই করবেন না। এই ধরণের রুটিন আসলেই বিরক্তিকর। কারণ রুটিন মানা আসলেই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। কিন্তু রুটিন ছাড়া পড়ায় মনোযোগ দেয়া কঠিন ব্যাপার।

কারণ রুটিন করলে মস্তিষ্ক তা একটা নির্দিষ্ট সময় করতে তাড়না অনুভব করবে। তাই রুটিন করা জরুরি। অতএব,রুটিন করুন বড়জোর একসপ্তাহ, এবং তা নিয়ম করে কষ্ট হলেও মানুন। এবং এই রুটিন আবার ১ সপ্তাহ পর পরিবর্তন করে নতুন রুটিন করুন নিজের সুবিধামত। এভাবে করলে পড়ার সময়টা একটু এদিক সেদিক হবে ঠিকই কিন্তু পড়ার অভ্যাসটা তৈরী হয়ে যাবে।

আরো পড়ুন;-

পর্যাপ্ত ঘুমানো-

দীর্ঘক্ষণ জেগে থাকলে আমরা নানা কিছুতে মনোযোগ দিয়ে থাকি। যার ফলে পড়ার ইচ্ছে থাকলেও মনোযোগ দেয়া সম্ভব হয় না। কারণ দীর্ঘক্ষণ জাগলে মস্তিষ্ক উত্তেজিত হয়ে থাকে,অস্থিরতা কাজ করে।

আমরা বিখ্যাত বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের ঘুম নিয়ে সেই জনপ্রিয় মন্তব্য কে না জানি,তিনি বলেছিলেন দিনে অন্তত ১০ ঘন্টা ঘুমাতে! তিনি নিজেও তা করতেন। মূলত পর্যাপ্ত ঘুমালে মস্তিষ্ক ঠাণ্ডা থাকে। গভীর চিন্তা করতে পারে, পড়া বা মুখস্থ করার জন্যে মস্তিষ্ক ঠাণ্ডা রাখা জরুরি। তাই প্রতিদিন কমপক্ষে ৬-৭ ঘন্টা ঘুমানো উচিত।

পর্যাপ্ত ঘুমানোর ফলে আপনি চিন্তা করতে, মনোযোগ দিতে পারবেন। তাই যখন রুটিন করবেন তাতে যথেষ্ট ঘুমানোর সময় রাখবেন। এই ঘুমটা রাতের ঘুম হলে সব থেকে উত্তম হয় কারণ রাতে জেগে থাকার ফলেই মূলত নানা হরমোনাল ইমব্যালেন্স হয় যার ফলে মাথা ভারী লাগা,অস্থিরতা কাজ করে। তাই রাতে পর্যাপ্ত ঘুম জরুরি।

ডিভাইস এডিকশন কমানো

আজকাল সবাই স্মার্টফোন ব্যবহারকারী, ফেইসবুক একাউন্ট নেই এমন মানুষ মেলা ভার। কিন্তু এই স্মার্টফোন বা ডিভাইস দীর্ঘক্ষণ ব্যবহার আমাদের অন্যান্য বিষয়ের প্রতি মনোযোগ কমিয়ে দেয়। যখন আমরা মোবাইলে কোন কিছু দেখি তখন মস্তিষ্কে ডোপামিনের পরিমাণ বাড়ে, এতে আরো বেশি ব্যবহার করার প্রবণতার সৃষ্টি হয়।

যার ফলে আমরা রাত জেগে বা পড়ার সময় মোবাইল ব্যবহার করি। তাই মনোযোগ ফিরিয়ে আনতে মোবাইল কম ব্যবহার করুন, মোবাইল ব্যবহারের সময়টাও চাইলে রুটিনে অন্তর্ভুক্ত করে নিতে পারেন।

যা যা মানতে হবে

নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন। নিজেকে যে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না সে দুনিয়ার ব্যর্থতম মানুষ। কিন্তু নিজেকে নিয়ন্ত্রণ হলো দুনিয়ার সব চেয়ে শক্ত কাজ।

মোবাইল বা ডিভাইস এডিকশন তাই আজকাল মহামারী হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা আমাদের তরুণ প্রজন্মের ক্যারিয়ারের জন্যে হুমকি স্বরূপ। তাই এডিকশন কমাতেই হবে যে করে হোক। এর জন্যে যা যা করণীয়ঃ

১.ক্যারিয়ার রিলেটেড চিন্তা ভাবনা করুন,যে ভিডিও গুলো দেখলেই দেখতে ইচ্ছে করে তা না দেখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন।

২.মোবাইল যে আপনার ধ্বংসের কারণ হচ্ছে তা উপলব্ধি করার চেষ্টা করুন।

৩. পরিচিত সার্কেল কমিয়ে যে মানুষ গুলো আপনার জীবনে আসলেই দরকারী তাদের গুরত্ব দিন।

৪. সময়ের যথাযথ ব্যবহার করুন, রুটিন মেনে চলুন।

৫.নিয়মিত ঘুম ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার চেষ্টা করুন।

৬.সোশাল মিডিয়াতে বন্ধুর সংখ্যা বেশি থাকলে আনফলো করে রাখুন। ভাবুন অন্যের রেস্টুরেন্টে খাওয়ার ছবি আপনার জীবনে কি ভূমিকা রাখছে!

৭. প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ডিভাইস ব্যবহারের জন্যে সময় নির্ধারণ করুন।

৮. অপ্রয়োজনীয় গ্রুপ পেইজ থেকে বেরিয়ে ক্যারিয়ারের ও পড়াশোনার কাজ লাগে এমন পেইজ গ্রুপে এড হোন।

৯. নিজেকে গুরুত্ব দিতে শিখুন। একটি উন্নত ক্যারিয়ার ছাড়া কোথাও দাম নেই এই কথা মনে রাখুন।

১০.নিজের ক্যারিয়ারের স্বার্থে যা কিছু আপনাকে বিপথে নিয়ে যেতে পারে তার মধ্যে আপনার ডিভাইসও থাকলে আজই দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে তা পরিত্যাগ করার সংকল্প করুন।

সহজে মুখস্থ করার উপায়

আমরা পড়া বা কোন কিছু মুখস্থ করতে না পারার কারণ হলো আমাদের মুখস্ত করার পদ্ধতি অনেক সময় ভুল হয়। তাই পদ্ধতি ঠিক না রেখে যতই গাধার খাটুনি খাটা হোক না কেনো তা কাজে লাগবে কম। যদিও প্রত্যেকের পড়ার পদ্ধতি নিজস্ব ও আলাদা হয় তবুও কিছু বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি মানলে আমরা সহজে পড়া রপ্ত করতে পারব।

লিখে লিখে পড়াঃ


স্কুলে স্যাররা কোন কিছু মুখস্থ করতে দিলে প্রায় বলতেন এইটা লিখে লিখে পড়বা কারণ ১০ বার পড়া থেকে একবার লিখা উত্তম। কারণ এতে পড়া দীর্ঘক্ষণ মনে রাখার ইঙ্গিত পায় মস্তিষ্ক। তাই কোন কিছু মুখস্থ করার হলে কয়েকবার পড়ার পাশাপাশি তা খাতায় লিখে ফেলুন।

মনে করার চেষ্টা করাঃ


কোন পড়া মুখস্থ করার সময় তা পড়ে আবার মনে করার চেষ্টা করলে তাতে তা দ্রুত মুখস্থ হয়, এই পদ্ধতিকে বলা হয় “active recall”. এই পদ্ধতি খুবই কার্যকরি এবং অব্যর্থ। তাই বার বার কোন কিছু পড়ে মুখস্থ করার চেয়ে কোন কিছু একবার দুবার পড়ে তা আবার মনে করার চেষ্টা করলে মস্তিষ্কের স্থায়ী মেমোরিতে সংরক্ষিত হয়।

এখানে বলে রাখা ভালো যে আমাদের মস্তিষ্কে দুই ধরণের মেমোরি কাজ করে। একটি স্থায়ী এবং অন্যটি অস্থায়ী মেমোরি। মস্তিষ্কের সামনের অংশ আমাদের অস্থায়ী মেমোরি বা স্মৃতি। এখানে কম সময়ের জন্যে স্মৃতি জমা থাকে।

যেমন গত পরশু দুপুরে কি খেয়েছেন তা চাইলেও হয় তো এখন মনে করতে পারবেন না। কিন্তু আপনি অনেক ছোট বেলার কথাও অকপটে বলে দিতে পারবেন। কারণ গত পরশু কি খেয়েছেন তা আমাদের অস্থায়ী মেমোরিতে ছিল।

আবার ছোট বেলার কোন বিশেষ ঘটনা তা সংরক্ষিত হয়ে গেছে আপনার স্থায়ী স্মৃতিতে তাই তা সহজে মনে আসছে। এভাবে এক্টিভ রিকলের মাধ্যমে অস্থায়ী মেমোরি থেকে পড়াকে স্থায়ী মেমোরিতে পাঠিয়ে পড়া দীর্ঘদিন মনে রাখুন।

দীর্ঘদিন মুখস্থ রাখার উপায়-

এতক্ষণ কিভাবে মুখস্থ করব তা নিয়ে আলোচনা করলাম।
এখন বলব কিভাবে মুখস্থ করা পড়া অনেক দিন মনে রাখা যাবে তা নিয়ে।

প্রেক্টিস করাঃ

ধরুন আপনি প্রতিদিন যে পথ দিয়ে স্কুলে যেতেন তা বিশ বছর ধরে না গিয়ে আজ হঠাৎ যাচ্ছেন। এই দীর্ঘ বিশ বছরে কি কোন পরিবর্তন দেখবেন না সেই পথে?

চীর চেনা পথ নিশ্চই অচেনা লাগবে?
কিন্তু একসময় যখন নিয়মিত যেতেন তখন নিশ্চয়ই চোখ বন্ধ করেই চলে যেতে পারতেন?
তাহলে এত দিনে কেন পারছেন না? কারণ একটাই, আগে নিয়মিত যেতেন এখন দীর্ঘদিন পর যাচ্ছেন।

তেমনি কোন পড়া বা বিষয় আমাদের মস্তিষ্কের সাথে যদি নিয়মিত চর্চা করা হয় তবে তা মনে রাখা কঠিন না। তাই যা শিখবেন তা শিখার পর ফেলে না রেখে ২/৩ দিন পর পর রিভাইস করুন অবশ্যই। এতে মস্তিষ্ক বিষয়টির সাথে পরিচিত থাকবে এবং চটজলদি আপনি তা মনে করতে পারবেন।

কষ্ট করে শেখাঃ

কষ্ট ছাড়া কেষ্ট মিলে না এই প্রবাদ কে না জানে! আসলেও বাস্তব জীবনে তাই। পড়া মুখস্থ করতে গিয়ে যদি কষ্ট হয় তবেই আপনার মস্তিষ্ক তা দরকারি ভাববে এবং আয়ত্ত করে নিবে। তাই পড়ার পদ্ধতি কে সহজ না করে কষ্ট করে শিখুন! যেমন বার বার পড়ে যাওয়া বিষয় আবার পড়লে তার জন্যে পরিশ্রমের দরকার হয় কম। কিন্তু কোন কিছু পড়ে তা লিখার চেষ্টা করলে কষ্ট হয় বেশি। মস্তিষ্কের খাটুনি হয় এতে।

তাই মুখস্থ করার পর তা লিখার চেষ্টা করুন। এতে মস্তিষ্ক এটিকে আয়ত্ত করে নিবে। এমনটা গণিত শিখতে গেলেও করতে পারেন,শুরুতেই গাইড থেকে উপায় না দেখে নিয়ে,নিজে নিজে করার চেষ্টা করুন।

কাজে লাগানোঃ

কোন কিছু শিখে রাখাই যথেষ্ট না। মনে রাখতে হলে সেটা ব্যবহার করুন। ছুরি যেমন দীর্ঘদিন ব্যবহার না করলে জং ধরে যায় তেমনি মুখস্থ করা বিষয়ও। তাই কোন কিছু মুখস্থ করলে তা নানা ক্ষেত্রে ব্যবহার করুন। ধরুণ আপনি একটি ইংরেজি শব্দ শিখেছেন তাহলে কথা বলার সময় সেটি ব্যবহার করুন তাহলে কিন্তু তা আপনার মাথায় স্থায়ী হয়ে যাবে। তাই কোন কিছু মুখস্থ করলে তার ব্যবহারও জরুরি, এতে এটি দীর্ঘদিন মনে থাকবে।

পরিশেষে বলা যায়, করোনার কারণে আমরা দীর্ঘদিন পড়াশোনা থেকে দূরে থাকায় আমাদের যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে পড়াশোনার, তাই এখনি সময় উপরের নিয়ম গুলো মেনে আবার পড়ায় গতি ফিরিয়ে আনার।

আমাদের আরো ব্লগ;-

https://namerboi.com

admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *