বাত ব্যথা হলে কি করবেন

বাত ব্যথা হলে কি করবেন

বাত ব্যথা বয়স্কদের বেশি হয়ে থাকে৷ বাত ব্যথা হলে হাড়ে প্রচণ্ড ব্যথার সৃষ্টি হয়। যা এক সময় বাড়তে থাকলে হাড় বাঁকা হয়ে যাওয়ার মত ঘটনাও ঘটে। বাত ব্যথার চিকিৎসা বেশ ব্যয়বহুল। সময় মত চিকিৎসা না করালে রোগী বেশ অসুবিধা ভোগ করতে থাকে। শীতে যেহেতু এই সমস্যা বাড়ে এবং সামনে শীত। তাই আজ আলোচনা করব বাত ব্যথায় করণীয় নিয়ে।

বাত ব্যথা

বাত ব্যথা কী-

প্রথমেই জেনে নিব বাত ব্যথা কি তা নিয়ে। সাধারণত দেড়মাসের বেশি কোন ব্যথা শরীরের হাড়ে বিদ্যমান থাকলে তাকে বাত ব্যথা বলা হয়। রক্তে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বেড়ে গেলে তা ক্রিস্টাল রূপে অস্থি সন্ধিতে জমা হয়ে বাত ব্যথার সৃষ্টি হয়। ইউরিক এসিড মূত্রের সাথে পরিমাণ মত বেরিয়ে যায়। এর থেকে বেশি পরিমাণ যকৃৎ যখন উৎপাদন করে তখন তা রক্তে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। যা অস্তি সন্ধিতে জমা হয়।

লাল মাংস,ফ্যাড জাতীয় খাবার,অতি মাত্রায় প্রোটিন গ্রহণ,ওয়াইন ইত্যাদি ইউরিক এসিড বেশি হওয়ার কারণ। এছাড়া কিডনী শরীর থেকে যথেষ্ট পরিমাণ ইউরিক এসিড ফিল্টার করতে না পারলে তার পরিমাণ বেড়ে যায়। এবং তা বাত রোগের কারণ হয়। বাতকে ইংরেজিতে আর্থ্রাইটিস বলা হয়।
বাত ব্যথা বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রকম হতে পারে। যেকোন বয়সে কেউ বাত ব্যথায় আক্রান্ত হতে পারে। তবে পুরুষদের ক্ষেত্রে ৪৫-৫০ বছর বয়সে এই রোগ দেখা দেয়। অন্যদিকে নারীদের ক্ষেত্রে রজঃশ্রাব বন্ধ হওয়ার পর ৪৫ বছরের পর এই সমস্যা দেখা দেয়।

বেশিরভাগ সময় কম বয়সীদের এই রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায় না।
যখন হাত পায়ের গিরায় তিব্র ব্যথা হয়ে থাকে তখন তাকে ইনফ্ল্যামেটরি জয়েন্ট ডিজিজ বলা হয়। সাধারণত সকালের দিকে বা বিশ্রামের শেষে এই ব্যথা তিব্র হয় এবং গিরা ফুলে যায়। এই ধরণের সমস্যা হলে ধরে নিতে হবে এটি বাত ব্যথার সমস্যা। তাই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

বয়স ভেদে বাত ব্যথা নানা রকম হয়ে থাকে। ৬ মাস থেকে ১৬ বছর বয়সীদের মধ্যে জুভেনাইল ইডিওপ্যাথিক আর্থ্রাইটিস দেখা যায়।
এই ব্যথায় আক্রান্ত রোগীদের মাংস পেশিতেও ব্যথা হয় আবার মেরুদণ্ডও ব্যথা হয়ে থাকে। তরুণ বয়সে স্পন্ডিলো অর্থ্রাইটিস হয়ে থাকে। ৪৫ উর্ধ্ব ব্যক্তিদের আর্থ্রাইটিস কে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বলা হয়। বৃদ্ধ বয়সে হাড়ের ক্ষয়জনিত আর্থ্রাইটিস হয়ে থাকে। একে অস্টিও আর্থ্রাইটিস বলা হয়ে থাকে।

কারণ-

শতকরা প্রায় ২০ ভাগ বাত ব্যথা বংশগত কারণে হয়ে থাকে। দেখা যায় রোগীর পরিবারের অন্য কারো ছিল। এছাড়া ডায়াবেটিস, স্থুলতা বা অতিরিক্ত ওজন। সিকল সেল এনিমিয়া,কিডনী রোগ বাতের কারণ। অন্যদিকে,নিয়মিত মধ্যপান করলে তা ইউরিক এসিড রেচনে সমস্যার সৃষ্টি করে যার ফলে তা বেড়ে যায়। ব্যথা নাশক ওষুধ অতিরিক্ত গ্রহণে কিডনী ক্ষতিগ্রস্ত হলে বাতের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এছাড়া কায়িক শ্রম কম করা, শুয়ে বসে জীবন কাটালে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।

চিকিৎসা-

চিকিৎসার মাধ্যমে বাত ব্যথা সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব হয় না। তবে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়। চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হলো অস্তি সন্ধিতে ইউরিক এসিড কমিয়ে আনা। চিকিৎসা না করা হলে তা অস্তি সন্ধির যথেষ্ট ক্ষতি করে। এর ফলে চলনশক্তিও হারিয়ে যেতে পারে। রোগের চিকিৎসার পূর্বে তা পরীক্ষা নীরিক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া। বাত নিশ্চিত হতে রেডিওলজি, এক্সরে নানা পরীক্ষা করতে হয়। পরীক্ষার ধরণ একেক বাতের জন্যে একেক রকম হয়।

বাত ব্যথায় প্রাথমিক পর্যায়েই ব্যথানাশক দেয়া হয়, রোগের ধরণ অনুযায়ী যেই ওষুধ দেয়া হোক না কেন সেটি ভেতর থেকে ব্যথা নাশ করে। এবং একসময় আর ব্যথানাশক নিতে হয় না। ব্যথা ভাল হয়।
অনেক ক্ষেত্রে ইনজেকশনের মাধ্যমে আক্রান্ত স্থানে ওষুধ দেয়া হয়। এছাড়া মুখে খাওয়ার জন্যে এস্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ দেয়া হয়ে থাকে। বাতের ব্যথার চিকিৎসার ধরণ অনুযায়ী ওষুধ দেয়া হয়। তাই যত দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া যায় তত দ্রুত নিরাময় পাওয়া যায়।

অনেকেই বাত ব্যথা সহ্য করতে না পেরে যে কোন প্রকার ব্যথার ওষুধ খেয়ে ফেলেন যা একে বারেই উচিত না। আপনার যদি কিডনী সমস্যার ফলে বাত ব্যথা হয়ে থাকে তবে তা কিডনীর অবস্থা আরো খারাপ করে দিয়ে ব্যথা বাড়ায়। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতিত কোন পদক্ষেপ নেয়া উচিত নয়।

বাত ব্যথার ধরণ অনুযায়ী চিকিৎসকের ধরণও আলাদা হয়। একরকম বাত ব্যথায় একধরণের চিকিৎসকের কাছে যেতে হয়। যেমন আপনার যদি অস্তি সন্ধি ব্যথার সাথে সাথে ফুলে যাওয়ার বাত ব্যথা হয়ে থাকে তবে যেতে হবে রিউমাটোলওজির ডাক্তারের কাছে। তেমনি স্নায়ুতে ব্যথা,মাংস পেশি ও আঘাতজনিত ব্যথা হলে একজন সার্জনের কাছে যেতে হবে। আবার যাদের অঙ্গ বিকৃতি ঘটে তাদের অবশ্যই ফিজিয়াট্রিক থেরাপি এর সাহায্য নিতে হবে। তবে যে কোন ধরণের ব্যথার প্রাথমিক পর্যায়ে একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ দেখাতে হবে।

প্রতিরোধ-

বাত ব্যথা থেকে রক্ষা পাওয়ার অন্যতম উপায় এর প্রতিরোধ। প্রতিকার থেকে প্রতিরোধ ভালো। তাই হওয়ার আগেই না হওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। এলকোহল যেহেতু ইউরিক এসিড শরীর থেকে বেরুতে বাঁধা দেয় তাই এলকোহল ছাড়তে হবে সবার আগে। নিয়মিত যথেষ্ট পরিমাণ পানি পান করতে হবে। লাল মাংস, কোলস্টরল জাতীয় খাবার পরিত্যাগ করতে হবে। নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে মাংসপেশি সচল রাখতে হবে। ব্যথানাশক ওষুধ কম খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। কারণ এতে কিডনীর ক্ষতি হয়।
যা আপনার বাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তাই কিডনীর যত্ন নিন। কিডনী আপনার শরীরের ফিল্টার।

উপশমের ঘরোয়া উপায়-

শীতে বাত ব্যথা যেহেতু বাড়ে তাই শীতে সর্বোচ্চ সর্তক থাকতে হয়। বিশেষ করে বয়স্ক রোগীদের বেশ সাবধান থাকতে হয়। শীতে ইষৎ উষ্ণ গরম পানি দিয়ে গোসল করতে হবে। ব্যথার স্থানে ঠাণ্ডা লাগলে ব্যথা বেড়ে যায় বিধায় ব্যথার স্থান উষ্ণ রাখতে হবে। গরম পানির সেক দেয়া যেতে পারে ব্যাগে ভরে। বাজারে রাবারের গরম পানির ব্যাগ পাওয়া যায়। এই গরম পানির সেক বেশ উপকার দেয়৷ ব্যাগের ব্যবস্থা করা না গেলে সুতির কাপড় স্ত্রী-মেশিনে গরম করে ব্যথার স্থানে ধরে সেক দেয়া যেতে পারে।

যেকোন রকম ব্যথায় আমাদের বসা বা শোয়ার অবস্থান অনেকটাই গুরুত্ব রাখে। তাই শোয়ার সময় খুব বেশি শক্ত আবার খুব বেশি নরম বিছানায় শোয়া উচিত নয়৷ শীতের সময় জীবন অনেকটাই স্থবির হয়ে থাকে। তাই হাঁটা চলা কম হওয়াতে ব্যথা বাড়ে। তাই শীতে বাইরে যাওয়া সম্ভব না হলে ঘরে হাল্কা ব্যায়াম করে নেয়া যেতে পারে৷

উপসংহার-

শীতে অনেক রোগই বেড়ে যায়। বিশেষ করে বয়স্কদের নানা সমস্যা দেখা দেয়। বাতের ব্যথা তার মধ্যে অন্যতম। তাই বাত ব্যথার ব্যাপারে সর্তক হয়ে কেবল একটি শীত নয় সারাজীবনের জন্যে নিজের একটি সুন্দর জীবন-যাপন পদ্ধতি গড়ে তুলুন৷ যা আপনাকে রক্ষা করতে পারে অনেক কষ্টদায়ক রোগ থেকে৷

admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *