ব্যাডমিন্টন খেলার নিয়ম ও কলা-কৌশল

ব্যাডমিন্টন খেলার নিয়ম ও কলা-কৌশল

শীতকালে বাংলাদেশে ব্যাডমিন্টন খেলার হিড়িক পড়ে। এই সময়টা টুকটাক গা গরম করে নিতে যে-কেউ ব্যাডমিন্টন খেলার সুযোগ লুফে নি। মূলত ব্যাডমিন্টন বাংলাদেশে একটি জনপ্রিয় খেলা। বর্তমানে এর জনপ্রিয়তা আরো বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু নিয়ম-কানুন না জানা থাকলে খেলে তেমন কোন আনন্দ পাওয়া যায় না। তাই আসছে শীতের প্রস্তুতি হিসেবে আজ আমরা ব্যাডমিন্টন খেলার কলা-কৌশল বা নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিব।

কি কি সরঞ্জাম প্রয়োজন হয়?

ব্যাডমিন্টন খেলার জন্যে খুব বেশি কোন সরঞ্জামের প্রয়োজন হয় না। এটি খুব সাধারণ কিন্তু আকর্ষণীয় খেলা। ব্যাডমিন্টন খেলার উপকরণ গুলো হলোঃ ব্যাডমিন্টন র‍্যাকেট,শাটল (প্রচলিত ভাষায় “কক” নামেও পরিচিত), নেট বা জাল, পোষ্ট বা খুঁটি এবং কোর্ট।

এখানে বলে রাখা ভালো কোর্টটি মাপঝোঁক মিলিয়ে তৈরি করা হয়।
যার ফলে খেলার নিয়ম ঠিক থাকে এবং যথাযথ খেলার মাধ্যমে যথেষ্ট আনন্দ পাওয়া যায়।

কোর্টঃ

ব্যাডমিন্টন খেলার প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করার পর কোর্ট আঁকতে হবে,সাধারণত মাঠের মাটি কেটে দাগ করে তাতে কোর্ট বানিয়ে খেলা হয়। কিন্তু যারা পাকা ফ্লোরে খেলে তারা সাদা রঙে কোর্ট এঁকে নিয়ে খেলে। মূলত ইনডোর ব্যাডমিন্টন খেলায় রঙ করে কোর্ট আঁকা হয়। কোর্টের আঁকার সাধারণত ৪৪ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২০ ফুট প্রস্থ হয়ে থাকে। এবং এর মাঝামাঝি দাগ টেনে দু’ভাগে আলাদা করে নিতে হয়। কোর্ট দুটির শেষ সিমানায় যে লাইনটি দেয়া হবে তা সিঙ্গেল খেলার সময় লং সার্ভিস বলা হয়ে থাকে। আবার দলগত খেলার সময় অর্থাৎ এক দলে দুজন করে খেলা হলে সেক্ষেত্রে কোর্টের দুই পাশের লং সার্ভিস লাইন নেটের ২.৫ ফুট দূরে দাগ দিতে হবে। কোর্টির দুই পাশেই একটি করে শর্ট সার্ভিস লাইন নেট হতে ৬.৫ ফুট দূরত্বে হয়ে থাকে। এটিও দাগ দিয়ে নিতে হয়।

পোষ্ট বা খুঁটিঃ

কোর্টের মাঝামাঝি যে লাইন আঁকা হয় তার দুই পাশে নেট টাঙানোর জন্যে দুটি খুঁটি মাটিতে স্থাপন করতে হয়৷ এগুলো কে বলা হয় পোষ্ট। পোষ্ট সাধারণত ৫ ফিট উচ্চতার হয়ে থাকে। যাই হোক,এটি কম বেশি উচ্চতার হলে তা নেট লাগাতে এবং খেলার সময় অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে। তাই এর সুষম উচ্চতা হওয়াই ভালো।

নেটঃ

খেলার অন্যতম আকর্ষণীয় উপকরণ হলো নেট বা জাল। যা কোর্টের মাঝামাঝি অবস্থানে দুই পাশ আলাদা করে টাঙিয়ে দেয়া হয়। বাজারে দুই পাশে ফিতা দিয়ে বাঁধা যায় এমন নেট পাওয়া যায় এই খেলার জন্যে। সাধারণত,২.৫ ফুট লম্বা হয় নেটের আকার এবং ২০ ফুট প্রশস্ত। খেলার সময় নেটের উচ্চতা মাটি থেকে কম পক্ষে ৫ ফুট উচ্চতায় রাখতে হয়। ব্যাডমিন্টন নেটের উপরের ধারে ৩ ইঞ্চি প্রশস্ত ফিতা দেয়া থাকে। এর ফাঁকা অংশের ভেতর দিয়ে রশি টেনে পোষ্টের সাথে বাঁধা হয়।

শাটলঃ

ব্যাডমিন্টন খেলতে গেলে এক একটি উপকরণের গুরুত্ব আলাদা আলাদা। যে কোন একটির অনুপস্থিতিতে সঠিক ভাবে খেলার নিয়ম মানা যেমন যায় না তেমনি খেলাও যায় না। শাটল এমন একটি উপকরণ। শাটলকে প্রচলিত ভাষায় ‘কক’ বলা হয়। যা ছাড়া খেলা সম্ভব না। মূলত, র‍্যাকেট দিয়ে শাটলকে আঘাত করে নেট পার করেই খেলা হয় ব্যাডমিন্টন।

র‍্যাকেটঃ

র‍্যাকেটকে প্রচলিত ভাষায় ‘ব্যাট’ বলা হয়। ব্যাডমিন্টন খেলায় দুই পাশে দুই দলের খেলোয়াড়রা এই র‍্যাকেট হাতে শাটলকে আঘাত করে এই খেলা খেলে। সিনথেটিক সুতা দিয়ে র‍্যাকেট তৈরি করা হয়। যার হাতল কখনো কাঠের আবার কখনো স্টিলের তৈরি হয়ে থাকে। র‍্যাকেটের বাইন্ডিং যত শক্ত ও মজবুত হবে তা দিয়ে শাটল আঘাত করে খেলা তত আনন্দদায়ক হয়।

খেলার নিয়মাবলি-

ব্যাডমিন্টন খেলার কলা-কৌশল আসলে খুব সহজ।

ব্যাডমিন্টন খেলার কলা-কৌশল বলতে আমরা এর নিয়ম গুলোকেই বুঝি মূলত।

যাইহোক,খেলায় আপনার মূল লক্ষ্য থাকবে কোর্টের মাঝামাঝি ঝোলানো নেটের উপর দিয়ে শাটল পার করে প্রতিপক্ষের কোর্টের মাটিতে ছোঁয়ানো। তাহলেই আপনি পাবেন একটি র‍্যালি।

পুরো খেলায় যে যত র‍্যালি বেশি পাবে সে তত এগিয়ে থাকবে। যার বেশি র‍্যালি হবে সে জিতবে। আবার,আপনি আপনার প্রতিপক্ষের করা ত্রুটি দিয়েও র‍্যালি জিততে পারেন। যেমন,প্রতিপক্ষ নেটের নিচে দিয়ে শাটল প্রদান করলে,অথবা নেটে জড়িয়ে ফেললে।

আবার আপনার যদি মনে হয় প্রতিপক্ষের শর্ট এত জোরে যে শাটলটি কোর্টের বাইরে গিয়ে পড়তে পারে তাহলে তা আর আপনার র‍্যাকেটে না লাগান। কারণ, লাগালে র‍্যালি আগের মত চলতে থাকবে। তবে আপনি না লাগালে সেটি বাইরে পড়লে একটি র‍্যালি আপনি পাচ্ছেন। বাস্কেট বল বা বলিবল খেলার মত ব্যাডমিন্টন খেলার সময় শাটল নিয়ে লোফালুফি করা যায় না। আবার শাটল একবার মাটিতে বাউন্স করলে তা পুনরায় আঘাত করে প্রতিপক্ষের কাছে পাঠানো যায় না। দলগত বা আলাদা খেলার সময় একি নিয়ম কাজ করবে।

পয়েন্টঃ
  • সাধারণত ৩ টি গেইম ২১ পয়েন্ট দ্বারা ১টি ম্যাচ হয়ে থাকে।
  • একটি সার্ভে একটি করে পয়েন্ট যুক্ত হয়।
  • কোন পক্ষ ১টি র‍্যালি জিতলে তার পয়েন্টের সাথে একটি স্কোর যোগ হবে।
  • সব মিলিয়ে ২০ পয়েন্ট হলে যে পক্ষ আগে ২ পয়েন্ট পেয়ে লিড নিবে সে পক্ষ জিতবে।
  • ২৯ পয়েন্ট পেয়ে যে পক্ষ আগে ৩০ পয়েন্ট করতে পারবে সেই পক্ষই খেলায় জিতবে।
  • একটি গেইম জেতার পর পরবর্তী গেমের শুরুতে যে পক্ষ জিতবে তারা সার্ভ করবে।
  • লিডিং পয়েন্ট ১১ হলে ৬০ সেকেন্ডের একটি বিরতি নেয়া যায়।
  • টানা দুটি গেইমের পর চাইলে ২ মিনিটের বিরতি নেয়া যায়।
  • ৩য় বারের খেলায় লিডিং পয়েন্ট ১১ হলে যদি সিঙ্গেল প্লেয়ার হয় তবে পার্শ্ব পরিবর্তন করতে হয়।
  • সার্ভারের পয়েন্ট স্কোর জোড় হলে সে তার ডানের কোর্ট থেকে সার্ভ করবে। আর বিজোড় হলে বামের কোর্ট হতে সার্ভ করবে।
  • যদি কোন সার্ভার র‍্যালি জেতে তাহলে সে কোর্ট পরিবর্তন করে সার্ভ করবে এবং একটি পয়েন্ট পাবে।
  • যে শাটল রিসিভ করবে সে যদি র‍্যালি জেতে তাহলে সে একটি পয়েন্ট পাবে ও সে সার্ভ করবে।
  • সার্ভিং পক্ষ র‍্যালি জিতলে তাহলে তাদের পয়েন্ট স্কোরে নতুন স্কোর যুক্ত হবে এবং তারাই সার্ভ করবে।
  • স্কোর অর্জন করার আগে কোন খেলোয়াড় নিজের সার্ভিস কোর্ট বদল করতে পারবে না।
  • শাটল পোষ্টে বাড়ি খেলে তা র‍্যালি হবে ও পয়েন্ট যুক্ত হবে

শীতকালে কেনো ব্যাডমিন্টন খেলা হয়?

বছরের যে কোন সময়েই মূলত ব্যাডমিন্টন খেলা যায় তবে তা ইনডোরে। আউটডোরে আমাদের দেশে দেখা যায় খেলাটি বেশি প্রচলিত শীতকালে। মাঝখানে ব্যাডমিন্টন খেলার চাহিদা কমে গেলেও বর্তমানে তা আবার জেগে উঠেছে এবং ব্যাডমিন্টন খেলতে পছন্দ করে না এমন মানুষ পাওয়া ভার। অপর দিকে,বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭২ সালে। যা এক সময় প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ব্যাডমিন্টন প্লেয়ার খুঁজে নেয় সারাদেশ থেকে। এর পর পরই খেলাটি এত জনপ্রিয়তা পায় আমাদের দেশে।

বিশেষত,শীতকালে ঠাণ্ডা আবহাওয়া বিরাজ করে। এসময় জনজীবন অনেকটা স্থবির হয়ে থাকে। তাই শীতে উষ্ণতা পেতে কম বেশি আমরা সকলে ব্যাডমিন্টন খেলতে পছন্দ করি। অন্যদিকে,এই সময় বাংলাদেশে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব থাকে না যার ফলে বাতাসে শাটল উড়ে যায় না। তাই খেলার অসুবিধা না হওয়ার জন্যে শীতকাল বেছে নেয়া হয়। লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাই ব্যাডমিন্টন খেলায় প্রচুর ক্যালরি খরচ হয় যার ফলে আমরা সহজে ক্লান্ত হয়ে পড়ি। গরমে এই ধরণের খেলা তাই উপযোগী নয়। মূলত এসব কারণে শীত মৌসুমে এই খেলার প্রচলন হয়।

উপরোক্ত আলোচনায় আমরা ব্যাডমিন্টন খেলার কলা-কৌশল ও বিস্তারিত নিয়মাবলি জানলাম। ব্যাডমিন্টন একটি ভালো এক্সারসাইজ। শীতে আমরা খুব বেশি অলস জীবন-যাপন করি তাই এই সময়টা নিয়ম মেনে বন্ধুদের সাথে ব্যাডমিন্টন খেলুন। সুস্থ থাকুন।

admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *