স্ট্যাম্প লেখার নিয়ম ও পদ্ধতি (A টু Z) বিস্তারিত
দৈনন্দিন জীবনে আমরা নানা বিষয়ে চুক্তি করে থাকি৷ চুক্তি করতে গিয়ে আমাদের আইনগত যে দলিলের প্রয়োজন হয় তাকেই বলা হয় স্ট্যাম্প। বাজারে বিভিন্ন মূল্যের স্ট্যাম্প পাওয়া যায়। যেমনঃ ১,২,৫,১০,২০,৫০,১০০ টাকার স্ট্যাম্প।
সাধারণত টাকা লেনদেন, জমির বায়নামা,কোন কিছু বন্ধকি রাখা,বা লিজ নিতে স্ট্যাম্প এর প্রয়োজন হয়। স্ট্যাম্প জুডিশিয়াল বা নন-জুডিশিয়াল হতে পারে।
কাজের ধরণের উপর নির্ভর করে স্ট্যাম্পটি কি রূপ হবে। আমরা দেখতে পাই কোন কাজে ২০ আবার কোন কাজে ৫০ টাকার স্ট্যাম্প ব্যবহৃত হয়। আবার একি কাজে বিভিন্ন দামের একাধিক স্ট্যাম্পও ব্যবহার হয়।
কোনটি কখন ব্যবহার হয় তা নিয়ে নানা জিজ্ঞাসা রয়েছে। আজ জানব কিভাবে স্ট্যাম্প লিখতে হয় ও স্ট্যাম্পের প্রয়োজনীয়তা।
স্ট্যাম্প লেখার নিয়ম
স্ট্যাম্প লিখার সাধারণ নিয়ম একি রকমই তবে বিষয়বস্তু কাজের ধরণের সাথে সাথে পাল্টে যায়।
অর্থাৎ আপনি যখন টাকা লেনদেনের জন্যে স্ট্যাম্প লিখবেন তখন একরকম হবে বিষয়, আবার যখন জমির ব্যাপারে করবেন তখন অন্য রকম হবে। সাধারণত প্রত্যেক স্ট্যাম্পে সেটির মূল্যমান লিখা থাকে। আপনি কি কাজে কত মূল্যের কাজ করছেন সে অনুযায়ী স্ট্যাম্প নিতে হয় এবং লিখতে হয়।
স্ট্যাম্প এ লিখা থাকে তা কত টাকার। একটি দলিলের মাঝামাঝি রঙ করা জায়গায় লিখা থাকে *গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার*। পুরো পৃষ্ঠা জুড়ে থাকা ভার্টিক্যাল মার্জিন এর উপর বরাবর লিখাটি থাকবে। মাঝামাঝি থাকবে কয়েনের পিঠের মত দেখতে দুইপাশে ধানের শীষ এবং মাঝে শাপলা সংবলিত লোগোর ছাপ।
মার্জিনের উপরে হাতের বামপাশে ও ডানপাশে যে কাজের জন্যে যত টাকার পরিমাণের স্ট্যাম্প লাগবে তার পরিমাণ লিখা থাকবে।
যেমন কোন কাজের জন্যে সরকার ধার্য অর্থ মূল্যের শতাংশ হিসেব করে ৫০ টাকা পরিমাণের স্ট্যাম্পের প্রয়োজন হলে উক্ত দলিল নিতে হবে এবং তাতে উপরে ডানে ও বামে লিখা থাকবে ৫০ টাকা।
এখন যে রঙিন বক্সের নিচে ধানের শীষের ছাপওয়ালা লোগোটি আছে তার নিচে লিখতে হবে স্ট্যাম্পের সমপরিমাণ টাকার সংখ্যা। এই সমস্ত কাজ থাকবে দলিলের সর্বপ্রথম পৃষ্ঠায় মার্জিনের সবার প্রথমে। অর্থাৎ শুরুতেই।
এরপর দলিলের চুক্তির সকল কথা বিস্তারিত লিখতে হবে এবং দুইপক্ষের স্বাক্ষর থাকবে। এভাবে যে বিষয়ের দলিল তা একি রকম নিয়মেই লিখা হবে, কেবল যে বিষয়ে যতটাকার স্ট্যাম্প প্রয়োজন হবে তার টাকার অংকের সংখ্যা বদলে যাবে।
স্ট্যাম্পের প্রয়োজনীয়তা
স্ট্যাম্প বিহীন যে কোন বড় লেনদেন অবৈধ বলে গণ্য হয়। কারণ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যের স্ট্যাম্প দিয়ে চুক্তি করতে হয়। যে কেউ ইচ্ছে করলে এটির মূল্য নির্ধারণ করতে পারবে না। যেমন ইচ্ছে লিখতে পারবে না।
১৮৯৯ এর তফসিল অনুযায়ী এবং পরবর্তীতে ২০১২-‘১৩ অর্থবছরের পরিবর্তনকৃত যে কাজের জন্যে নির্ধারিত যে মূল্যমানের স্ট্যাম্প তা ব্যবহার না করেন তবে পরবর্তিতে স্ট্যাম্প বাজেয়াপ্ত বলে গণ্য হবে।
অন্যদিকে ঠিক করতে গেলে বা প্রতারিত হলে তা আপনাকেই জরিমানা দিয়ে ঠিক করতে হবে। তাই এই স্ট্যাম্প অত্যান্ত জরুরি। স্ট্যাম্প করার সময় তাই জানতে হবে কি কাজে কত টাকা মূল্যের স্ট্যাম্প প্রয়োজন।
আরো পড়ুন;-
- বিদেশে উচ্চশিক্ষা
- দরখাস্ত লিখার নিয়ম উদাহরণ সহ বিস্তারিত জেনে নিন
- জাপান ও চীনে যেভাবে স্কলারশিপ পাবেন এবং উচ্চশিক্ষার জন্যে যাবেন।
কোন কাজে কত টাকার স্ট্যাম্প
২০১২-২০১৩ অর্থবছরের বাজেটে সংশোধন করে
স্ট্যাম্পের মূল্যমান বৃদ্ধি করা হয়েছে। তাই কেউ পুরোনো স্ট্যাম্প দ্বারা চুক্তি করলে তা বাতিল বলে গণ্য হবে। এর কোন আইনগত ভিত্তি থাকবে না। বিভিন্ন রকম স্ট্যাম্পের মূল্য সম্পর্কে ধারণা দেয়া হলোঃ
১. বায়নামার দলিল,চুক্তিনামা,অঙ্গিকারনামা, রিডেম্পশন,মেমোরেন্ডাম অব এগ্রিমেন্ট এর দলিলের জন্যে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্প।
২.অছিয়তনামার দলিলের জন্যে ৩০ টাকার স্ট্যাম্প।
৩.বন্ড, বন্টননামা,নকলের কবলা,সার্টিফায়েড কপির দলিলের জন্য ৫০ টাকার স্ট্যাম্প।
৪.তালাকের হলফ নামার দলিলের জন্যে ৫০০ টাকার স্ট্যাম্প যুক্ত করতে হয়।
৫. খাসমোক্তার নামা এবং অনুলিপির জন্যে ১০০ টাকার স্ট্যাম্প।
৬.ট্রাস্ট ডিড ক্যাপিটাল মূল্যের দলিলের উপর ২ শতাংশ টাকার সমমানের স্ট্যাম্প।
৭.অংশীদারি দলিলের জন্যে ২০০০ টাকা মান মূল্যের স্ট্যাম্প।
৮.কোন কোম্পানির আর্টিক্যাল অব এসোসিয়েশমের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকার স্ট্যাম্প লাগানো যেতে পারে।
৯.ক্লার্কশিপের জন্যে ৪০০ টাকার স্ট্যাম্প।
১০.হেবার ঘোষণা পত্র,না দাবি পত্র,বায়নার হলফনামা,হলফনামা,বাতিলকরণ দলিলের জন্যে ২০০ টাকার স্ট্যাম্প।
১১.আমমোক্তার ও সাবকবলার জন্যে ৪০০ টাকার
স্ট্যাম্প।
১২.বন্ধকির ক্ষেত্রে ১ থেকে ২০ লাখ পর্যন্ত ২ হাজার টাকার, ২০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকার বন্ধকির জন্যে ৫ হাজার টাকার ও ১ কোটি টাকার উপরের বন্ধকির জন্যে ৫০০০ হাজার টাকা ও প্রতি লাখে ২ শতাংশ হারে মোট টাকার মূল্যমানের স্ট্যাম্প প্রয়োজন হয়।
১৩.বটমরি বন্ডে পণ্যের শতকরা ২ শতাংশ এর মূল্যমানের স্ট্যাম্প সংযুক্ত করতে হয়।
১৪.শুল্ক বন্ডের জন্যে ১ হাজার বা ২ হাজার টাকা মানের স্ট্যাম্প লাগে।
১৫.রোয়েদাদের ক্ষেত্রে শতকরা হিসেব করে স্ট্যাম্প যুক্ত করতে হয়।
এছাড়া নানা কাজে আরো নানা রকম স্ট্যাম্প যুক্ত করতে হয়।
উপরোক্ত বর্ণনা থেকে জানা যায় কিভাবে স্ট্যাম্প লিখা যায় এবং কোথায় কত টাকা মূল্যের স্ট্যাম্প প্রয়োজন হয়। উক্ত নির্দেশনা অনুসরণ করে আমরা সহজেই স্ট্যাম্প ব্যবহার করে দলিল লিখে নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় চুক্তি সম্পন্ন করতে পারি।
আমাদের অন্যান্য ওয়েবসাইট
কেউ কোন অঙ্গিকারনামা দিতে চাইলে কত টাকার স্ট্যাম্পে লিখতে হবে?