আপনার জীবনের লক্ষ্য কি।। মাহমুদা তিন্নি।।
বলা হয়ে থাকে “Time flies” সময় উড়ে যায়! আসলেই কি তাই নয়?
এই সময় যেটা চলে আসছে তা কোটি টাকা খরচ করেও কি কোন দিন ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পারবেন?
তাহলে আমাদের নিশ্চয় উচিত নয় কোন কিছুর মোহে পড়ে এই সময়ের এক ফোটাও নষ্ট করা? কিন্তু কিভাবে সময়কে করবেন কার্যকরী? স্থীর করবেন জীবনের লক্ষ্য? আসুন আজ জেনে নি এই সম্পর্কে।
আপনার জীবনের লক্ষ্য কি?
আমরা অনেকেই পড়াশোনা করছি বা শেষ করব, কিন্তু কেউ জিজ্ঞেস করলে বলতে পারি না আমাদের জীবনের লক্ষ্য কি। জীবন একটি বিশাল ব্যাপার, নিশ্চয়ই আমাদের মত ক্ষুদ্র মানুষ যেভাবে এটা নিয়ে ভাববে সেভাবে হবে না।
স্রষ্টা আমাদের জন্যে আরো বড় কোন পরিকল্পনা করেও থাকতে পারে। কিন্তু তবুও আমাদের সবার নিজস্ব কিছু চিন্তা ভাবনা চাওয়া পাওয়া থাকে যার ফলে আমরা নিজেদের জন্যে, নিজের পরিবার,সমাজ ও দেশের জন্যে ভালো কিছু করার পরিকল্পনা করি। এবং সে অনুযায়ী কাজ করার চেষ্টা করি।
তাই আমাদের জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত আমাদের দেশ জাতী পরিবার ও নিজেদের জন্যে কল্যাণকর কিছু। যা আপনি করতে পছন্দ করেন, যেটির সাথে আপনার সামঞ্জস্যতা আছে সেটিকেই আপনার জীবনের লক্ষ্য বানান। এবং সে অনুযায়ী সাজিয়ে নিন নিজের পরিকল্পনা ।
কিভাবে লক্ষ্য ঠিক রেখে কাজ করবেন?
জীবনের লক্ষ্য ঠিক করলেও সে অনুযায়ী কাজ করা অনেকের কাছেই কঠিন কিন্তু আপনি যদি যেকোন কাজকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে প্রতিদিন অল্প অল্প করে করেন তবে তা কখনোই আপনার জন্যে কঠিন হবে না।
তাই যখনি আপনি লক্ষ্য স্থীর করবেন তা অর্জনের জন্যে আপনাকে নিজেকে প্রতিদিন একটু একটু করে গড়ে নিতে হবে। কিন্তু কথা হলো নিজেকে গড়া কি এত সহজ? না সহজ না!
নিজেকে গড়তে হলে আপনাকে আপনার সংকল্পে স্থীর থাকতে হবে। প্রাবন্ধিক মোতাহের হোসেন চৌধুরী বলেছিলেন-কোথাও উঠার জন্যে কেবল অন্য কেউ উপর থেকে টানাই যথেষ্ট নয়, চাই নিচ থেকেও ধাক্কা দেয়া।
তাই আপনি নিজে যদি নিজেকে পরিবর্তনের চেষ্টা না করেন তাহলে কখনোই নিজেকে গড়া সম্ভব হবে না। অন্য কেউ যতই বলুক তাতে কাজ হবে না। তাই নিজেকে গড়ার জন্যে আগে সংকল্প করুন। এরপর একটু একটু করে এগিয়ে যান।
আরো পড়ুন;-
- জাপান ও চীনে যেভাবে স্কলারশিপ পাবেন এবং উচ্চশিক্ষার জন্যে যাবেন।
- স্ট্যাম্প লেখার নিয়ম ও পদ্ধতি (A টু Z) বিস্তারিত
ধরুন আপনি কোন বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চান। এর জন্যে আপনার প্রয়োজন বিশাল পড়াশোনার জগতে ডুবে যাওয়া। অথবা হতে চান বিসিএস ক্যাডার বা ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার কিন্তু তা নিশ্চয়ই একদিনে হওয়া সম্ভব না? অনেক পড়াশোনা তাই একসাথে না করে, যা হলে এসব হওয়া যায় তা ঠিক করে ফেলে গুছিয়ে নিয়ে প্রতিদিন অল্প অল্প পড়ুন।
আপনার লক্ষ্যে প্রতিদিন হাজারটা বাঁধা আসবে। বলা হয়ে থাকে ভালো কাজে বাঁধা না আসলে সেটি নাকি ভালো কাজই না। নানাজন নানা কথা বলবে,মন নানা দিকে যেতে চাইবে।
কিন্তু কোন দিকে না তাকিয়ে আপনাকে আপনার সংকল্পের কথা মাথায় রেখে কাজ করে যেতে হবে। যাতে একটা সময় মাথা উঁচু করে বলতে পারেন আমি জীবনে যা হতে চেয়েছি তা অক্লান্ত পরিশ্রম দিয়ে অর্জন করে নিয়েছি ।
আপনি যা পছন্দ করেন তা করুন
জীবনের পরিকল্পনা বিষয়টি যার যার জন্যে আলাদা। একজনের জীবনের লক্ষ্য কোন দিনও অন্যজন ঠিক করে দিতে পারে না। বরং আশা করতে পারে আপনি কি হবেন।
তাই নিজের জীবনের লক্ষ্য প্রত্যেককে নিজে থেকে ঠিক করতে হয়। কারণ আমরা আলাদা মানুষ এবং আমাদের সকলের চাহিদা ও জীবনবোধ পৃথক। তাই নিজের জীবনের পছন্দ নিজে বেছে নিতে হবে।
তার জন্যে প্রয়োজন নিজে কি পছন্দ করেন তা জানা। আপনি আপনার যা ভালো লাগে তা অর্জন করার সাধ্যমত চেষ্টা করলে আপনার পথ সহজ হবে। কারণ ভালো লাগার বিষয় করতে আমরা সবাই পছন্দ করি। তাই আপনার যদি ডাক্তারি পড়ার আগ্রহ থাকে তাহলে তা নিয়ে শুরু থেকেই নিজেকে সেভাবে তৈরি করুন।
আপনার গায়ক হতে ইচ্ছে হলে বা শিল্পী হতে চাইলে তাই আপনি হওয়ার চেষ্টা করুন। যেখানে আপনার মেধা যা আপনি পছন্দ করেন তাতেই নিজেকে ব্যয় করুন।
লক্ষ্য স্থীর রাখতে রুটিনের গুরুত্ব
জীবনের লক্ষ্য অপরিবর্তনীয় রাখতে রুটিন করা জরুরি। জীবনে সফল ব্যক্তিরা সকলেই রুটিনের মধ্যে চলতেন। ম্যাপ ছাড়া যেমন নতুন জায়গায় পৌঁছানো যায় না তেমন নির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ছাড়া জীবনের লক্ষ্য স্থীর রাখা যায় না। তাই নিজের লক্ষ্য স্থীর রাখতে রুটিন করুন।
রুটিন আপনাকে প্রতিদিনের কাজ অল্প করে করতে উৎসাহিত করবে এবং প্রতিদিন অল্প অল্প কাজের মাধ্যমে এগিয়ে যাবেন আপনি আপনার কাঙ্খিত লক্ষ্যের দিকে।
তবে কেবল রুটিন করা নয়, তা অনুশাসনের সাথে মানা আপনার দায়িত্ব এটি মনে রেখে রুটিন মেনে চলুন। একটি সঠিক রুটিন আপনাকে এগিয়ে নিবে বহুদূর। রুটিনের গুরুত্ব আপনি প্রথম দিকে না বুঝলেও পরবর্তীতে টের পাবেন কত ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সময়ের মূল্য দিতে জানা
কেবল বুদ্ধিমানরাই সময়ের কাজ সময়ে করে সময়ের মূল্য দিয়ে থাকে। এটি কে না জানে। জীবনের কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে সময়ের মূল্য দিতে শিখতে হবে। যে যার সময়কে যত বেশি কাজে লাগাবে জীবনে চলার পথে সে তত বেশি এগিয়ে থাকবে। তাই সময়কে মূল্য দিতে শিখুন।
অযথা সময় নষ্ট না করে নিজের সময়কে কাজে লাগান। যা আপনার লক্ষ্য অর্জন করার পথ সুগম করে তাতে আপনার সময় ব্যয় করুন এর বাইরে না।
ভুল জায়গায় অযথা সময় দিয়ে নিজের ভবিষ্যৎ কেবল বোকারাই নষ্ট করে।
কিভাবে সময়ের মূল্য দেয়া যায় এটা একটা বড় প্রশ্ন। হতে পারে আপনি পড়ায় মনোযোগ দিতে পারছেন না বা প্রোডাক্টিভ কিছু করতে পারছেন না। শুয়ে বসে সময় নষ্ট করছেন৷
এর জন্যে নিজের সংকল্পে ফিরে আসা জরুরি৷ অন্যদিকে অনেকেই সোনালী সময় নষ্ট করছে আড্ডা দিয়ে বন্ধুদের সাথে। একদিন হয় তো খেয়াল করবেন এই বন্ধুরা আড্ডা দিতে দিতেই যে যার মত প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে কিন্তু কেবল জীবনের লক্ষ্য স্থীর করেননি এবং সময়ের সঠিক ব্যবহার করেননি বলে পিছিয়ে গেছেন আপনি।
আসলে কি জানেন,সবার জীবনের গোপন কিছু লক্ষ্য থাকে যা তারা অন্য কাউকে বলে বেড়ায় না৷ নিজের মত এগিয়ে যায়।
অপর দিকে,জীবনে খুব বেশি মানুষের প্রয়োজনও হয় না। তাই আজ যারা বন্ধু বলে কাছে আছে একদিন জীবনে সাফল্যের অভাবে এই বন্ধুরা যে থাকবে না এটা আশা করাই যায়।
তাই খুব বেশি বন্ধুর সংখ্যা না রেখে কমিয়ে নিন আর আড্ডাবাজি কমিয়ে দিন, নিজের সময়কে কিছু শেখায় কাজে লাগান এতেই সময়ের মূল্য দিতে পারবেন।
পাছে লোকে কিছু বলে
আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষের সমস্যা হলো আমরা নিজের আগে অন্যের কথা ভাবি! অর্থাৎ নিজের কি পছন্দ তা করতে গেলে হাজারবার ভাবে এই কাজটা করলে এ কি ভাববে,ও কি ভাববে!
এসব ভেবে নিজের পছন্দের কাজ যেখানে, মেধা দিয়ে সে অনেক কিছু করতে পারতো তা থেকে সরে আসে। এবং অনিচ্ছের শর্তেও নিজের অপছন্দের কাজ করে সারাজীবন কাটিয়ে দেয় কেবল লোকে কি ভাববে তা চিন্তা করে।
কিন্তু এমন করে আবার আফসোস করে গিয়ে শেষ বয়সে। তাই সময় থাকতে লোকে কি ভাববে তার চিন্তা না করে নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে যান। মনে রাখুন লোকের কাজই বলা।
তাই যতক্ষণ বলতে চায় বলতে দিন লোককে,যে পর্যন্ত না আপনার করা কাজ অন্যের পথে বাঁধা হচ্ছে, ততক্ষণ লোকে কি ভাবছে তা ভাবার দরকার নেই। নিজের পথে নিজের দিপ্তিতে এগিয়ে যান।
নিজের স্বপ্নে বাঁচুন
লক্ষ্য ঠিক করার অন্যতম শর্ত স্বপ্ন দেখা৷ যে যা স্বপ্নই দেখে না সে তা অর্জন করার কাজও করতে পারে না। তাই আপনার যা লক্ষ্য তা আপনার স্বপ্নও। এপিজে আব্দুল কালাম এর উক্তি দিয়ে এখানে বলতে চাই “স্বপ্ন সেটা নয় যা তুমি ঘুমিয়ে দেখো,স্বপ্ন সেটাই যা তোমাকে ঘুমাতে দেয় না”।
তাই স্বপ্ন দেখুন আর তা নিয়ে কাজ করুন। আপনার স্বপ্নে কেউ বিশ্বাস করুক আর না করুক আপনার স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রেখে তার জন্যে কাজ করে যাওয়াই হবে আপনার একমাত্র দায়িত্ব, তবেই লক্ষ্য হবে স্থীর।
যা কিছু আপনার লক্ষ্যে বাঁধা
আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা বলেন যদি তোমার প্ল্যানে তোমার মা বাবা ভাই বোনও বিশ্বাস না করে তবুও থামার প্রয়োজন নেই। তুমি একা নিজেকে বিশ্বাস করে কাজ করে যাও।
পথে যাই বাঁধা আসুক পার করো। এখানে বলে রাখা ভালো লক্ষ্য অর্জনে আপনার লক্ষ্যের বাঁধা গুলো আগে যাচাই করুন কি কি আপনার পথে বাঁধা হিসেবে কাজ করতে পারে। যেমন অনেকের শক্তি সামর্থ্য, পুঁজি,শিক্ষা সব থাকার পরও তারা সফল না কারণ কেবল অলসতা।
আপনি একবার ভাবুন তো, আপনার পথে কি মূল বাঁধা এখন অব্দি সোশাল মিডিয়া? যা আপনার সময়কে গিলে খাচ্ছে? তাহলে কি এটি ডিঙিয়ে যাওয়া আপনার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না? নাকি অন্য কেউ এসে এই সমস্যার সমাধান করতে পারে? হ্যাঁ একমাত্র আপনিই পারবেন আপনার এই সমস্যার সমাধান করতে।
সুতরাং, দীর্ঘক্ষণ সোশালমিডিয়ার জগতে থাকা থেকে ফিরে আসুন। যে বন্ধু-বান্ধব আপনার পথে বাঁধা,যারা ক্যারিয়ার নিয়ে তেমন ভাবে না তাদের সঙ্গ কমিয়ে যারা ভাবে তাদের সাথে আলাপ করুন বেশি। এভাবে এসব ছোট খাটো ব্যাপার আমাদের চোখ এড়িয়ে আমাদের পথে বাঁধা হয়ে আছে। যা চাইলেই আমরা সহজে সমাধান করতে পারি। তাই যা কিছু আপনার পথে বাঁধা তা থেকে সরে আসুন।
শেষ কথা-
সময় উড়ে যায় শুরুতেই বলেছিলাম। তাই সেই সময়ের সাথে আপনার জীবনও উড়ে যাচ্ছে, জীবনকে সফল করতে তাই সময় থাকতে উপযুক্ত পরিকল্পনার মাধ্যমে নিজের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যান। নিজেকে নিজে উন্নত করা ছাড়া মানুষের আর কোন উপায় নেই যত দিন বুঝবেন না ততদিন পরিবর্তন করতে পারবেন না নিজেকে।
লেখক;- মাহমুদা তিন্নি। ব্লগার, কলামিস্ট, সাহিত্যিক ও মোটিভেশনাল।
আমাদের আরো সাইট;- https://namerboi.com/