মোটরসাইকেল রেজিষ্ট্রেশন করার নিয়ম(A টু Z) বিস্তারিত জেনে নিন

মোটরসাইকেল রেজিষ্ট্রেশন করার নিয়ম(A টু Z) বিস্তারিত জেনে নিন

মোটরসাইকেল রেজিষ্ট্রেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

কারণ,বর্তমান যুগে মোটরসাইকেল একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় বাহন। কেউ শখ করে কেউবা প্রয়োজনে মোটরসাইকেল ক্রয় করে থাকেন। মোটরসাইকেল কেনার পর আমাদের প্রথম চিন্তা এর রেজিষ্ট্রেশন করা। কারণ রেজিষ্ট্রেশন বিহীন যান যেমন অবৈধ তেমনি তা রাস্তায় নামালে বা চুরি হলে অনেক ঝামেলার মুখোমুখি হতে হয়। তাই মোটরসাইকেল রেজিষ্ট্রেশন সম্পর্কে জেনে রাখা উত্তম।
আজ জানব মোটরসাইকেল রেজিষ্ট্রেশনের নানা দিক নিয়ে।

মোটরসাইকেল রেজিষ্ট্রেশন করার নিয়ম
মোটরসাইকেল রেজিষ্ট্রেশন করার নিয়ম

কেনো করবেন-


বাংলাদেশ সরকারের সড়ক পরিবহন আইনের ধারা ১৬ অনুযায়ী যদি কোন ব্যক্তি রেজিষ্ট্রেশন বিহীন মোটরযান নিয়ে বের হোন তবে তাকে অনধিক ছয় মাসের কারাদণ্ড অথবা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা  হবে অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। তাই মোটরসাইকেল রেজিষ্ট্রেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ না করলে সমুক্ষিণ হতে হবে জরিমানা অথবা জেলের।
তাই আপনার কেনা মোটরসাইকেলটি রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে।

যেভাবে মোটরসাইকেল রেজিষ্ট্রেশন করবেন-

আমাদের দেশে মোটরসাইকেল রেজিষ্ট্রেশন করা একটু ভোগান্তির কাজ৷ BRTA এর আন্ডারে করতে হয় বলে বেশ ঝামেলা পার হতে হয় এতে।
তবে ধাপ গুলো জানা থাকলে আপনি সহজে মোটরসাইকেল রেজিষ্ট্রেশন করতে পারবেন। মোটর সাইকেল রেজিষ্ট্রেশন করার জন্যে প্রথমেই আপনি যে ডিলার থেকে মোটরসাইকেলটি ক্রয় করেছেন তার থেকে আইনত কাগজপত্র বুঝে নিন। অনেক সময় ডিলাররা নিজে রেজিষ্ট্রেশন করে টাকা আত্নসাত করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গোপন রাখে তাই কি কি নিতে হবে তা জেনে নিন।
মোটরসাইকেল রেজিষ্ট্রেশন করতে যা যা লাগবেঃ

১.প্রথমেই প্রয়োজন হবে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র এর কপি।

২.যে আমদানি কারক আমদানি করেছেন তার  অনুকূলে সোনালী ব্যাংকের ট্রেজারি চালান।

৩.গেট পাস। 

৪.ক্যাশ মেমো৷

৫.যে ডিলার থেকে নিয়েছেন ও আমদানি কারক উভয়ের অনুকূলে মূসক ১১ চালানপত্রটি নিতে হবে।

৬.আমদানি সংক্রান্ত কাগজ পত্র।

৭.কাস্টমস সংক্রান্ত কাগজপত্র।

উপরোক্ত সকল কাগজপত্র সংযুক্ত করার পর BRTA এর ওয়েব সাইটে বা সরাসরি অফিসে গিয়ে রেজিষ্ট্রেশন ফর্ম নিতে হবে। এই ফর্মের সাথেই আপনি আপনার উপরের সব কাগজপত্র অন্তর্ভুক্ত  করে নিবেন।
কেননা এটিই আপনার মোটরসাইকেল রেজিষ্ট্রেশন আবেদনপত্র। তাই ঠিকভাবে সব পূরণের পর সাবধানতার সাথে লক্ষ্য করুণ সব দিয়েছেন  কিনা।

কারণ,মোটরসাইকেল রেজিষ্ট্রেশন প্রক্রিয়া খুবই জটিল তাই ছোটখাটো ভুলের জন্যেও ভোগান্তি হয় অনেক। ফর্ম পূরণের পর BRTA এর অফিসে গিয়ে এপ্লিকেশন সেটটি যাচাই করে নিন। সব কিছু ঠিক থাকলে  অনুমোদন পাবেন,তবে আপনাকে রেজিষ্ট্রেশনের জন্যে ফী দিতে  হবে। এর জন্যে আপনাকে একটি এসেসমেন্ট স্লিপ দেয়া হবে এটিকে মানি ডিপোজিট স্লিপও বলা হয়। এই স্লিপে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য এবং মোটরসাইকেলটির তথ্য দিতে হবে। মোটরসাইকেল কেনার সকল খরচের বিবরণ এতে থাকতে হবে।
সব কিছু পূরণের পর অফিসিয়াল স্বাক্ষর ও সীল নিতে ভুলবেন না। অবশ্যই নিয়ে নিতে হবে।

কোন মোটরসাইকেল রেজিষ্ট্রেশনের জন্য কত খরচ হবে-

সকল তথ্য সংক্রান্ত কাগজপত্র  ঠিক করে BRTA কর্তৃক নির্ধারিত বুথে বা ব্যাংকে নির্ধারিত পরিমাণ ফী দিতে হবে। কিছু মোটরসাইকেল এর নির্ধারিত ফী নিচে দেয়া হলোঃ

যে মোটরসাইকেল ৫০-১০০ সিসি এবং ওজন ৯০ কেজির উপর সেটির জন্যে মোট খরচ হবে ১৭,৩৯০ টাকা। যদি মোটরসাইকেলটি  ৯০ কেজি ওজনের নিচে হয় তবে খরচ হবে ১২,৩৯০ টাকা প্রায়।

১০১-১৫০ সিসি এর মোটরসাইকেল ওজন  ৯০ কেজি এর বেশি হলে খরচ হবে ১৮,৭৯০ টাকা প্রায়।
৯০ কেজি এর নিচে হলে মোটরসাইকেল এর জন্যে খরচ করতে  হবে  প্রায় ১৩,৭৯০ টাকা।

তবে সকল ফী এর উপর সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মোট ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়।
তাই টাকা জমা দেওয়ার সময় ভ্যাট সহ জমা দিতে হবে অবশ্যই।
এছাড়া কত খরচ হতে পারে তা আপনি BRTA এর ওয়েব সাইটে বিশেষ ক্যালকুলেটর দিয়ে কেবল মোটরসাইকেলটির  তথ্য দিয়ে হিসেব করে নিতে পারেন।  যদি এটি না করেন তবুও সমস্যা নেই কারণ আপনাকে যে ডিপোজিট স্লিপটি দেওয়া হবে তাতে লিখা থাকবে কত অর্থ দিতে হবে।

রেজিষ্ট্রেশন সার্টিফিকেট যেভাবে নিবেন-

ব্যাংকে টাকা জমাদান শেষ করার পর সব কাগজপত্র  BRTA অফিসে পূণরায় জমা দিতে হবে।
এরপর যানবাহন পরিদর্শক অফিসার আপনার মোটরসাইকেলটি ও সব কাগজপত্র যাচাই করে একোনলেজমেন্ট স্লিপ দিবে যেটিতে মোটরসাইকেলের রেজিষ্ট্রেশন নম্বর, ট্যাক্স টোকেন,
ফিটনেস,দেয়া থাকবে।

এ পর্যায়ে শুধুমাত্র এটি বহনের মাধ্যমে যে কোন জায়গায় মোটরসাইকেলটি নিয়ে ভ্রমণ করা যাবে।
এরপর বায়োমেট্রিক রেজিষ্ট্রেশন এর জন্যে নির্দিষ্ট সময় আপনাকে যেতে হবে। বায়োমেট্রিক
তথ্যসংগ্রহের  কিছুদিনের মধ্যে সম্পন্ন হবে রেজিষ্ট্রেশনটি৷
রেজিষ্ট্রেশন শেষ হলে আপনি মোবাইলে মেসেজ পেয়ে যাবেন। পরবর্তীতে যে কোন সময় ডেস্ক থেকে আপনার নম্বরপ্লেট সংগ্রহ করতে পারে। সাধারণত ১ মাস সময়ের মধ্যে নম্বর প্লেটটি নেওয়া যায়।

রেজিষ্ট্রেশন হয়েছে কিনা যেভাবে দেখবেন-

মোবাইলের মেসেজ অপশন থেকে  টাইপ করতে হবে  VAHAN এরপর স্পেস দিয়ে রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার প্রদান করে পাঠিয়ে দিন 7738299899 নাম্বারে, এবার ফিরতি মেসেজে আপনার গাড়ির তথ্য দেখে নিন।

যেভাবে নবায়ন করবেন-

সাধারণত মোটরসাইকেল নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে রেজিষ্ট্রেশন অনুমোদন পায়। অই সময়ের পর আবার নবায়ন করতে হয়। নতুবা রেজিষ্ট্রেশন বাতিল বলে গণ্য হয়।
তাই ট্যাক্স টোকেন রিইস্যু করতে আপনার রেজিষ্ট্রেশনের আগের কাগজপত্র নিয়ে BRTA  কর্তৃক নির্ধারিত  ব্যাংকে আবার নির্দিষ্ট ফী প্রদান করে ইস্যু করে  নিতে পারেন নতুন করে।

উপসংহারে


বলা যায় মোটরসাইকেল রেজিষ্ট্রেশন একটি জটিল প্রক্রিয়া।  তাই সর্তকতার সাথে ধাপ গুলো পূরণের মাধ্যমে আপনার মোটর সাইকেল রেজিষ্ট্রেশন করে নিন। নতুবা পোহাতে হবে অহেতুক ঝামেলা।

admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *