ব্র্যাক ব্যাংক লোন
ব্র্যাক ব্যাংক লোন বর্তমানে বহুল জনপ্রিয়। দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষদের আর্থিক সহায়তা দিতে গ্রাম থেকে শহর সর্বত্র এই লোন জনপ্রিয়। ব্র্যাক ব্যাংক লোন নিতে হলে এই লোনের ধরণ ও শর্ত সমূহ নিয়ে প্রাথমিক ধারণা থাকা ভাল। এই আর্টিকেলে মূলত এই লোন সম্পর্কে সামগ্রিক ধারণা প্রদান করা হবে।
ব্র্যাক ব্যাংক লোন এর ধরণঃ
অন্য ব্যাংক গুলোর মত ব্র্যাক ব্যাংকও বিশেষ বিশেষ প্রজেক্টে লোন প্রদান করে থাকে। অর্থাৎ বিভিন্ন ব্যাংক দিয়ে থাকে বিভিন্ন রকম লোন। তেমনি ব্র্যাক ব্যাংকও তিনটি ভিন্ন খাতে লোন দিয়ে থাকে। ব্র্যাক ব্যাংক থেকে যে তিন প্রকারের লোন নেয়া যায় তা হলো-
১.বাড়ির জন্য লোন
২.ব্যক্তিগত লোন
৩.গাড়ি লোন।
উপরোক্ত তিন ধরণের লোন নিতে আপনাকে কিছু কাগজপত্র সরবারাহ করতে হবে। এই লোন গুলোর সুদের হার,নেওয়ার উপায় সমূহ আলোচনা করা হবে এই আর্টিকেলে।
ব্র্যাক ব্যাংক বাড়ির লোনঃ
বর্তমানে হাউজ লোন বেশ জনপ্রিয়। দেশের প্রায় প্রতিটি ব্যাংক এই লোন সুবিধা দিয়ে থাকে। তেমনি ব্র্যাক ব্যাংকও। তাই আপনার স্বপ্নের বাড়ি কিংবা ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানের জন্যে বিল্ডিং নির্মাণে লোন নিন ব্র্যাক ব্যাংক থেকে।
শর্ত সমূহ-
১. বাড়ি নির্মাণের লোন নিতে লোন প্রসেসিং এর জন্যে ২% মোট এমাউন্ট থেকে চার্জ করা হবে।
২.বাড়ি নির্মাণ লোন সর্বোচ্চ ২০ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। লোন নেওয়ার সময় সীমার পর থেকে এই সময় গণনা করা হবে।
৩. এই লোনের জন্যে ৯% সুদের হার প্রযোজ্য হবে।
৪. সর্বোচ্চ ২০ কোটি টাকা পর্যন্ত এই লোন নেয়া যায়।
লোন নেওয়ার যোগ্যতা-
১.লোন গ্রহীতার মাসিক আয় হতে হবে ৩০ হাজার টাকা।
২.লোন গ্রহীতার বয়স সর্বনিম্ন ২৫ বছর থেকে উর্ধ্বে ৬৫ বছর হতে হবে। এই বয়স সীমার মধ্যে হলেই লোন গ্রহণ করা যাবে।
৩. সাধারণত প্রাইভেট,পার্টনারশিপ মালিকানার যে কোম ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজারকে এই লোন প্রদান করা হয়।
৪.এই লোন গ্রহণের ক্ষেত্রে আপনি যে ব্যবসায় জড়িত সেটির সাথে কম পক্ষে ৩ বছর সম্পৃক্ত থাকার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
হাউজ লোন গ্রহণের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র-
১.পার্টনারশীপ বিজন্যাস হলে উক্ত বিজন্যাস এর দলিল।
২. আপনার এন আইডি কপি বা পাসপোর্টের কপি।
৩. আপনার এক বছরের স্যালারি স্টেটমেন্ট।
৪. নিম্নের এক বছরের ব্যাংক লেনদেনের স্টেটমেন্ট।
৫. ভাড়ার চুক্তিপত্র ও ইউটিলিটি বিলের কপি।
৬. আপনার পেশাদারীত্বের সার্টিফিকেট।
৭. নিবন্ধিত মালিকানার চুক্তিপত্র।
প্রতিটি ব্যাংক থেকে লোন নিতে কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাধারণত সরবারাহ করতে হয়। কিন্তু উপরোক্ত ডকুমেন্টস ছাড়াও আরো অন্য কাগজপত্র চাইলে তা আপনাকে দিতে বাধ্য থাকতে হবে।
ব্র্যাক ব্যাংক ব্যক্তিগত লোনঃ
আপনি যদি ব্যক্তিগত কারণে লোন নিতে চান। লোন নিয়ে নিজের বিজনেস দাঁড় করাতে চান। কিংবা জমি কিনতে চান। যে কোন ব্যক্তিগত প্রয়োজনে লোন নিতে চান তবে ব্র্যাক ব্যাংক পারসোনাল লোন আপনার জন্যে।
ব্র্যাক ব্যাংক ব্যক্তিগত লোন শর্তাবলি-
১.লোন গ্রহীতার বয়স হতে হবে ২৫-৬৫ বছরের মধ্যে।
২.কোন রকম জামানত ছাড়াই এই লোন নেওয়া যাচ্ছে।
৩.সর্বনিম্ন ১ লক্ষ টাকা থেকে ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত এই লোন নেওয়া সম্ভব।
৪. ১ বছর থেকে ৫ বছরের মধ্যে এই লোন পরিশোধ করতে হয়।
৫. এই লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে ২% প্রসেসিং ফী দিতে হবে।
লোন নেওয়ার জন্যে যোগ্যতা-
১.লোন গ্রহীতার মাসিক আয় হতে হবে সর্বনিম্ন পঁচিশ হাজার টাকা।
২.আপনি কোন পেশায় নিয়োজিত হলে সেখানে কম পক্ষে একবছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
৩. ব্যবসার সাথে জড়িত থাকলে উক্ত ব্যবসায় কমপক্ষে তিন বছরের অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হবে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র-
১. লোন গ্রহীতার এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি ও এন আইডি কার্ড।
২. বিগত ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
৩. সর্বশেষ কর সনদ।
৪. পার্টনারশিপ ব্যবসা হলে নিবন্ধন চুক্তি পত্র।
৫.পাঁচ বছরের ট্রেড লাইসেন্স।
ব্র্যাক ব্যাংক গাড়ি লোনঃ
স্বপ্নের গাড়ি কেনার জন্যে হাতে টাকা না থাকলে ব্র্যাক ব্যাংক আপনাকে দিবে অটো লোন বা গাড়ির লোন।
এক্ষেত্রে যা যা করণীয়-
১. গাড়ি কেনার পর্যাপ্ত টাকা না থাকলে গাড়ির মূল্যের ৫০% ব্যাংক লোনের মাধ্যমে দিতে পারবেন।
২. সর্বোচ্চ চল্লিশ লাখ টাকা এই লোন নিতে পারবেন।
৩.সর্বনিম্ন ১ বছর এবং সর্বোচ্চ ৫ বছরের মধ্যে এই লোন পরিশোধ করতে হয়।
৪. রিকন্ডিশন অথবা সেবামূলক গাড়ির জন্যে এই লোন প্রদান করা হয়।
৫.এই লোনের জন্যেও ২% প্রসেসিং চার্জ নেওয়া হয় মোট একাউন্টের।
এই লোন গ্রহণের যোগ্যতাঃ
১.আপনি চাকুরিজীবী হলে মাসিক আয় কমপক্ষে ২৫ হাজার টাকা হতে হবে।
২. ব্যবসায়ী হলে সে ক্ষেত্রে ৩০ হাজার টাকা হতে হবে আয়।
৩. চাকুরিজীবী লোন গ্রহীতার ক্ষেত্রে চাকরিতে ১ বছরের অভিজ্ঞতা এবং ব্যবসায়ী হলে কমপক্ষে ৩ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র-
১.লোন গ্রহীতার ১ বছরের ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
২. ১ বছরের আয়কর পরিশোধের প্রমাণ।
৩. পাসপোর্ট বা এন আইডি ফটো কপি।
৪.গাড়ির প্রয়োজনীয় ও বিস্তারিত কাগজ পত্র।
৫. ব্যবসায়ী হলে ট্রেড লাইসেন্স।
৬. চাকুরিজীবী হলে আইডি কার্ড।
৭. লোন আবেদনকারির ভিজিটিং কার্ড।
৮. এক কপি ছবি ও পেশাদারি হলে সেটির সনদ।
এই ছিল ব্র্যাক ব্যাংক থেকে লোনের বিস্তারিত আলোচনা।
ব্র্যাক হতে সহায়তা গ্রহণে যেভাবে যোগাযোগ করবেনঃ
লোন সংক্রান্ত বা যে কোন ব্যাংক কার্যক্রম জানতে ব্র্যাক ব্যাংকে যোগাযোগ করতে এই পদ্ধতি গুলো গ্রহণ করতে পারেন-
হটলাইনঃ অন্যসকল ব্যাংকের মত ব্র্যাক ব্যাংকেরও হটলাইম নম্বর রয়েছে। যেকোন প্রয়োজনে কল করুন – ১৬২২১ নম্বরে। ব্র্যাক ব্যাংকের যেকোন সেবা সম্পর্কে জানতে সপ্তাহে ৭ দিন এবং দিনে ২৪ ঘন্টায় এখানে কল করতে পারেন। এতে আপনি একজন কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধির সাথে সংযুক্ত হবেন এবং জানতে পারবেন।
Email: সহজে তথ্য জানতে বর্তমানে ই-মেইল খুবই জনপ্রিয় এবং কার্যকরী। ব্র্যাক ব্যাংকের ই-মেইল হলো-
equiry@bracbank.com.
এখানে ই-মেইল করার মাধ্যমে আপনি তথ্য জানতে পারবেন।
ব্র্যাক ব্যাংক ফ্যাক্স ও ফোনঃ
সর্বাধিক সেবা প্রদান করতে ব্র্যাক ব্যাংকে রয়েছে ফ্যাক্স ও ফোন নাম্বার সুবিধা। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে ও সহজে নিম্নে ব্র্যাক ব্যাংকের ফ্যাক্স ও ফোন নাম্বার প্রদান করা হলো।
ফোন নম্বরঃ +৮৮ ০২ ৮৮০১৩০১-৩২
০৯৬৭৭৫৫১০০১-৩১
ফ্যাক্সঃ +৮৮ ০২ ২২২২৯৮৯১০
উপসংহারঃ
সকল ব্যাংকের সুদ হার লোন অনুযায়ী বিভিন্ন হয়ে থাকে। উক্ত আলোচনায় আমরা কেবল লোন নেওয়ার পদ্ধতি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আলোচনা করেছি। উক্ত লোন গুলোর সুদের হার জানতে সরাসরি কথা বলতে আপনার নিকটস্থ ব্র্যাক ব্যাংক ব্রাঞ্চে যেতে পারেন অথবা যোগাযোগ করতে পারেন উল্লেখকৃত মাধ্যম গুলোয়।