জনতা ব্যাংক লোন
জনতা ব্যাংক বাংলাদেশের একটি প্রথম সারির ব্যাংক যেটি জনতা ব্যাংক লিমিটেড নামে পরিচিত। এই ব্যাংকটি যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সকল স্তরের গ্রাহকদের ব্যাংকিং সুবিধা প্রদান করে আসছে। এক্ষেত্রে জনতা ব্যাংকের লোন কার্যক্রম বিশেষ ভাবে আলোচ্য৷ বর্তমানে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রভাব ও করোনা ভাইরাসের প্রকোপে ব্যবসায়ীক ক্ষতির কারণে অনেকেই লোন নিচ্ছেন। তাই জনতা ব্যাংকের লোন পদ্ধতি আজ আমাদের আলোচ্য বিষয়।
যে সকল খাতে প্রদান করেঃ
সকল ব্যাংক সকল খাতে লোন দেয় না। কিছু নির্দিষ্ট খাতে দিয়ে থাকে বাছাই করা এসব খাতের জন্যে আবার ব্যাংক অনুযায়ী আলাদা সুদের হার,নেওয়ার পদ্ধতি ও পরিশোধ পদ্ধতি থাকে। তেমন জনতা ব্যাংক ও এর ব্যতিক্রম নয়৷ জনতা ব্যাংক যে সকল খাতে লোন প্রদান করে তা হলো-
১.জনতা ব্যাংক শিক্ষা লোন।
২. পল্লী উন্নায়ণের জন্যে লোন।
৩.পেনশন ভোগীদের জন্যে বিশেষ লোন।
৪.বাড়ি নির্মাণ লোন।
৫.পেশাজীবীদের জন্যে লোন।
৬.গরু পালনের জন্যে লোন।
উপরোক্ত সকল লোন নিয়ে আমরা এই আর্টিক্যালে আলোচনা করব। কারণ ব্যাংক হতে লোন নিতে কি কি শর্ত পূরণ করতে হয় তা আগে থেকেই জানা ভালো। তাহলে নিতে সুবিধা হয়।
জনতা ব্যাংক শিক্ষা লোনঃ
জনতা ব্যাংক শিক্ষা লোন নিতে হলে আপনাকে অবশ্যই কমপক্ষে দুই বছর কোন সরকারি, বেসরকারি, আধা সরকারি বা স্বায়াত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত হতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার প্রতিষ্ঠানে আপনাকে নির্বাহী কর্মকর্তার ভূমিকায় থাকতে হবে৷
উক্ত লোন নিতে হলে শর্ত হলো-
১. এই লোনের জন্যে ১১% সুদের হার দিতে হবে।
২.সর্বনিম্ন ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা নেওয়া যাবে।
৩.এই লোন সেমিস্টার হিসেবে বা মাসিক হিসেবে প্রদান করতে হবে।
৪.যে লোন নিবে তাকে ব্যাংক কর্তৃক প্রদানকৃত কাগজে সই করে গ্যারান্টার হতে হবে।
৫. এই লোনের মেয়াদকাল হবে ৫ বছর।
উপরের শর্ত সমূহ ছাড়াও ব্যাংক যদি অন্য কিছু চায় তাহলে সেসব পূরণের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি জনতা ব্যাংক শিক্ষা লোন নিতে পারবেন।
জনতা ব্যাংক পল্লি উন্নায়ণ লোনঃ
পল্লি উন্নায়ণের জন্যে বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংক জনতা ব্যাংক পল্লির নারী-পুরুষের আর্থিক সহযোগীতা কল্পে পল্লি উন্নায়ণে এই লোন প্রদান করে থাকে। এই লোন গ্রহণের মাধ্যমে স্বাবলম্বিতা অর্জন সম্ভব। গ্রামঅঞ্চলের জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নতির জন্যে এই লোন পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। যার মাধ্যমে খামার,চাষাবাদ,ক্ষুদ্রশিল্প, কুটির শিল্পে বিনিয়োগের মাধ্যমে পল্লি সমাজের মানুষ উন্নায়ণ করছে।
এই লোন নিয়ে আরো কিছু বিশেষ তথ্য-
১.যে প্রকল্পের জন্যে নেওয়া হবে তার উপর আপনি কত লোন পাবেন তা নির্ভর করবে।
২.এই লোন সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা অব্দি নেয়া যাবে৷
৩.সুদের হার ৯ শতাংশ।
৪.এই লোনের জন্যে কিস্তি নির্ভর করবে আপনার মাসিক আয়ের উপর।
৫. গ্যারান্টার করতে হবে এমন ব্যক্তিকে যে ৫০,০০০ টাকা অব্দি দিতে সক্ষম।
এই লোন নিতে আপনার যে সকল কাগজপত্রের দরকার হবে-
১. এন আইডি কার্ডের ফটো কপি।
২.প্রকল্পের প্রমাণ।
৩.গ্যারান্টারের কাগজ পত্র।
৪.চাষকৃত জমির জন্যে নিতে চাইলে তার দলিল।
৫.জামানত হিসেবে যা দিতে চান তার দলিল।
৬.এবং ব্যাংক কর্তৃক অন্য কোন ডকুমেন্টস চাইলে তা।
পেনশন ভোগীদের জন্যে বিশেষ লোনঃ
অবসর প্রাপ্ত পেনশন ভোগী ব্যক্তিদের জন্যে এই লোন চালু করেছে জনতা ব্যাংক। আপনি যদি কোন প্রতিষ্ঠান হতে অবসর প্রাপ্ত কর্মকর্তা/ কর্মচারী হয়ে থাকেন এবং পেনশন নিয়ে থাকেন তাহলে এই লোন গ্রহণ করতে পারবেন।
এই লোন নেওয়ার শর্ত সমূহ-
১.আপনি যে প্রতিষ্ঠান হতে অবসর নিয়েছেন তা সরকারি বেসরকারি যাই হোক না কেন সেখানকার অবসর প্রাপ্ত হওয়ার প্রমাণ।
২.এই লোনের উপর ৯% সুদের হার পূরণ করতে হয়৷
৩.সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকা এই লোন নেওয়া যাবে।
৪.এই লোনের মেয়ার ৫ বছর। এবং ৬০ কিস্তিতে এটি দিতে হয়।
৫.মাসিক হিসেবে পরিশোধ করতে হয়।
যা যা প্রয়োজন হবে-
১. এই লোন নিতে হলে সন্তান,স্বামী/স্ত্রী যে কোন ৩য় পক্ষকে গ্যারান্টার করতে হবে৷
২.ব্যাংক হিসেব স্টেটমেন্ট দেখাতে হবে।
৩.এই লোন আপনি জনতা ব্যাংক এর যে কোন শাখা হতে নিতে পারবেন।
৪. নিজের এন আইডি, অবসর এর প্রমাণ।
৫. আয়ের হিসেব বিবরণী।
জনতা ব্যাংক বাড়ি নির্মাণ লোনঃ
একটি স্বপ্নের বাড়ি গড়ে তোলা সবারই শখ থাকে৷ কিন্তু সকলের এই বিশাল খরচ বহন করা সম্ভব হয় না। তাই জনতা ব্যাংকের মত ব্যাংক গুলো এই সকল ব্যক্তিদের স্বপ্নের সহোযোগিতায় এগিয়ে আসে লোন দেয়ার মাধ্যমে। এই লোন প্রদানে যে সকল শর্ত মানতে হয় তাহলো-
১.বাড়ি নির্মাণের ৬০% হারে এই লোন দেয়া হয়। অর্থাৎ কোন বাড়ি নির্মাণে ১ কোটি টাকা খরচ হলে তার ৬০ লাখ ব্যাংক কর্তৃক লোন দেয়া হবে৷
২ . এই লোনের সুদ চক্রবৃদ্ধি হারে ১১%।
৩.মাসিক হিসেবে এই লোন পরিশোধ করতে হয়।
৪. পনেরো বছরের মধ্যে এই লোন পরিশোধ করতে হয় তবে ১ বছর প্রেস পিরিয়ড ধরা হয়।
৫. এই লোন গ্রহণে আপনাকে বাংলাদেশি নাগরিক হতে হবে।
৬.গ্যারান্টি হিসেবে উক্ত নির্মানাধিন ভবনের রেজিস্ট্রার ব্যাংকের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হবে।
যা যা লাগতে পারে-
১.স্থানীয় নাগরিকত্ব সনদ। যা আপনি ওয়ার্ড কমিশনার হতে নিতে পারেন।
২. আপনার এই আইডি ও ছবি।
৩.গ্যারান্টির কাগজপত্র।
৪. ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
৫. ইউটিলিটি বিলাধির প্রমাণ।
৬. আয় বিবরণী।
৭. ব্যবসায়ী হলে ট্রেড লাইসেন্স।
ইত্যাদি।
পেশাজীবীদের লোনঃ
সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিরা বিশেষ প্রয়োজনে এই লোন নিতে পারে। এই লোন নিতে আপনাকে আপনার প্রতিষ্ঠান প্রধানের প্রত্যায়ন পত্র দেখাতে হবে।
যেভাবে নিতে পারবেন-
১. এই লোন বেতনের সর্বনিম্ন ১২ গুণ অব্দি নেওয়া যায়।
২.মাসিক হারে পরিশোধ করতে হয়৷
৩.এই লোনে সুদের হার ৯%
৪.জামানত হিসেবে দিতে হবে প্রতিষ্ঠান প্রধানের প্রত্যায়িত কপি।
৫. সর্বনিম্ন ২ হতে সর্বোচ্চ ৪ বছর মেয়াদে এই লোন নেওয়া যায়।
যে সকল কাগজ পত্র লাগবে-
১. এন আইডি বা পাসপোর্ট কপি।
২.আপনার ছবি।
৩.আপনার প্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ড।
৪.বেতনের হিসেব বিবরণী।
৫. ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
৬. গ্যারান্টারের কাগজপত্র।
৭. ব্যাংক কর্তৃক চাহিদামত কাগজপত্র।
গরু পালন লোনঃ
কৃষক হিসেবে নির্বাচিত যে কোন ব্যক্তি গাভী বা গরু পালন লোন নিতে পারে৷ এ ক্ষেত্রে গ্রাহককে কৃষি কাজের সাথে সরাসরি জড়িত থাকতে হবে। তাহলে কেউ গাভী পালন লোন নিতে পারবেন।
এক্ষেত্রে যা যা মানতে হবে-
১.একটি গাভীর জনে ৯০,০০০ বরাদ্দ করতে হয়, সর্বোচ্চ ৪টি গাভী ক্রয় করা যাবে।
২.এই লোনের কোন জামানত পূরণ করতে হয় না।
৩.এই লোনের কিস্তির ধরণ পাক্ষিক।
৪. এই লোনের জন্যে সুদের হার ৯%।
উক্ত লোন নিতে যে সকল কাগজপত্র দেখাতে হবে-
১. এন আইডি কার্ড।
২.যে খাতে নিয়োজিত তার প্রমাণ।
৩.ছবি।
উপসংহারঃ
ব্যাংক থেকে লোন নিতে হলে বিস্তারিত জানা জরুরি। এ ক্ষেত্রে সম্ভব হলে ব্যাংকের শাখায় গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করাই উত্তম। কিন্তু অনেকের পক্ষেই সরাসরি যাওয়া সম্ভব হয় না তাই এই প্রাথমিক তথ্য উপস্থাপনের আমাদের সামান্য প্রচেষ্টা।