মামলা ও জিডি করার পদ্ধতি (A টু Z) বিস্তারিত জেনে নিন

মামলা ও জিডি করার পদ্ধতি (A টু Z) বিস্তারিত জেনে নিন

মামলা ও জিডি করার পদ্ধতি জেনে রাখা উত্তম কারণ-

মামলা ও জিডি করার পদ্ধতি
মামলা ও জিডি করার পদ্ধতি

আইনের সহায়তা নিতে আমাদের নানা সময় মামলা ও জিডি করতে হয়। মামলা ও জিডির পার্থক্য রয়েছে,কখন মামলা আর কখন জিডি করতে হয় তা নিয়ে অনেকের রয়েছে জিজ্ঞাসা। চাইলে যে কেউ নিয়মের বাইরে গিয়ে যেমন মামলা করতে পারে না আবার কখন নিরাপত্তা চেয়ে করতে হয় জিডি তা জানা অত্যাবশ্যক। কারণ সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপের অভাবে আপনি ন্যায্যতা হারাতে পারেন। তাই আজ জানব মামলা ও জিডি নিয়ে।

মামলা ও জিডি কাকে বলে-

যখন ব্যক্তিগত জীবনে কিংবা আমাদের সামনে হওয়া কোন অপরাধ থেকে আমরা ক্ষতির সমুক্ষিন হই বা অন্য কারো ক্ষতির আশংকা থাকে তখন আমরা আইনের সহায়তা চেয়ে নিকটস্থ থানায় বা আদালতে প্রতিকার চাইতে যাওয়ার কথা ভাবি। কিন্তু কখন জিডি বা সাধারণ ডায়েরি করব আবার কখন মামলা বা এজাহার করব তা জানা থাকে না।

মামলা বলতে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে থানায় এজাহার দাখিল করাকে বুঝায়। আর জিডি হলো কোন ঘটনা থেকে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলে পূর্ব সর্তকতা মূলক থানায় দিন তারিখ উল্লেখ পূর্বক লিখিত ভাবে জানিয়ে রাখা। জিডি হলো কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে রাখা। জিডির প্রাথমিক তদন্ত করতে গিয়ে যদি কোন ঘটনা পুলিশের কাছে গুরুতর মনে হয় তবে পুলিশ বাদী হয়ে নন-এফায়ার মামলা করবে৷

মামলা যেভাবে করবেন-

এজাহার ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি,তার পরিবার, পরিচিতজন কিংবা ঘটনাটি হতে দেখেছে বা শুনেছে এমন কেউও করতে পারে। এজাহার করা মানে মামলা রুজু করা। এজাহার করা ভালো হয় যে থানার অধীনে ঘটনাটি ঘটেছে সেই থানায়। এজাহারে ঘটনার বিস্তারিত, কখন হয়েছে তার সময়, কিভাবে কার দ্বারা কার সাথে হলো বিস্তারিত লিখা থাকবে।

এজাহারকারির স্বাক্ষর ও পূর্ণ ঠিকানা এজাহারে উল্লেখ থাকতে হবে অবশ্যই। আবার যদি কেউ থানায় এসে মৌখিক ভাবে এজাহার করে তাহলে থানায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ঘটনাটি শুনে লিখবেন এবং এজাহারকারিকে ঘটনা পড়ে শোনাবেন। পরবর্তীতে তার স্বাক্ষর গ্রহণ করবেন। ও কার্যকারি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

জিডি করতে হলে-

সাধারণত ছোটখাটো ক্ষতির সমুক্ষিন হলে বা কোন ঘটনা থেকে ক্ষতির আশংকা থাকলে থানায় পুলিশকে অবগত করে সাধারণ ডায়েরি বা জিডি করতে হয়। জিডি করতে কোন খরচের প্রয়োজন হয় না। এখানে শুধু আপনি পুলিশকে জানিয়ে রাখছেন যে ঘটনাটি হয়েছে বা হতে পারে। আপনি ভীত।

এবং পুলিশ ঘটনার গুরুত্ব অনুসারে তার প্রাথমিক তদন্ত করবে। ধরুন আপনাকে কেউ হত্যার হুমকি দিল তাহলে আপনি থানায় তা অবগত করতে জিডি করবেন। যাতে পরবর্তীতে হামলা বা কিছু গুরুতর হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে পুলিশ আগে থেকেই সর্তকতার সাথে তা প্রতিরোধ করতে পারে। এবং আপনার নিরাপত্তা বিধান করতে পারে।

কখন মামলা করবেন-

গুরুতর কিছু হলে তার থেকে যদি আপনার বা অন্যকারো ব্যক্তিগত ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে তবে মামলা করতে পারবেন। মামলা দুই ধরণের হয়ে থাকে, দেওয়ানী ও ফৌজদারি মামলা। ফৌজদারি মামলা সরাসরি করা অপরাধের ক্ষেত্রে করা হয়ে থাকে। যেমন,চুরি, ছিনতাই, খুন,ধর্ষণ ইত্যাদি ।

আর জমি-জমা,পারিবারিক সংঘাত ও মানহানির মামলা করা হয় দেওয়ানি আদালতে। ফৌজদারি মামলা আদালত কিংবা সংশ্লিষ্ট থানা উভয় জায়গায় করা হয়ে থাকে৷ তবে নিকটস্থ থানায় করলে দ্রুত প্রতিকার পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে থানা বিশেষ কোন কারণ ছাড়া মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানাতে পারে না।

যদিও কোন থানা কর্মকর্তা মামলা না নিতে চায় তাহলে তার উর্ধতন কর্মকর্তাকে জানানো উচিত। তবুও মামলা না নিতে চাইলে সরাসরি মামলা আদালতে করতে হবে। আদালত এজাহার দিলে পুলিশ কর্তৃক তা এফায়ার গঠিত হয়ে তদন্ত আরাম্ভ হতে বাধ্য।
দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে সরাসরি তা আদালতে করতে হয় এবং আদালত আইনত ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।

কেনো ফৌজদারি মামলা নিকটস্থ থানায় করবেন তার পিছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে অপরাধের আলামত নষ্ট না হওয়া। যদি কোন ধর্ষণের ঘটনা ঘটে তবে যত দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্ভব মামলা করতে হবে। নতুবা তার আলামত নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এভাবে খুন, চুরি বা ডাকাতির ঘটনায়ও মামলা করতে পারেন। অনেক সময় চুরি বা ছিনতাইয়ের ঘটনায় থানা কর্তৃপক্ষ মামলা না করে জিডি করতে বলে, সেক্ষেত্রে ঘটনার গুরুত্ব আপনার কাছে কেমন তা বিবেচনা করে সে অনুযায়ী মামলা করাই উচিত।

কখন জিডি করবেন-

কোন ব্যক্তি বা তার পরিবার ক্ষতির ভয় পেলে,কারো প্র‍তি অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগলে জিডি করা যায়।
কোন ব্যক্তি হারিয়ে গেলে,মূল্যবান কিছু হারিয়ে গেলে (সার্টিফিকেট, এনআইডি কার্ড,জন্মনিবন্ধ,পাসপোর্ট,ড্রাইভিং লাইসেন্স ইত্যাদি), চুরি, ছিনতাই হলে, হত্যার হুমকি,ধর্ষণের হুমকি পেলে নিকটস্থ থানায় জিডি করা যায়।

জিডি কখন মামলায় রূপ নেয়-

থানা কর্মকর্তাদের ভাষ্যনুযায়ী বেশিরভাগ জিডির ঘটনায় পরবর্তী কোন পদক্ষেপ নিতে হয় না। যেমন কেউ হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তেমন কোন তদন্ত করতে হয় না। কিন্তু তদন্ত করার পর যদি পুলিশ অপহরণ বা খুনের আলামত পায় তাহলে পুলিশ বাদি হয়ে মামলা করে। আবার জিডি কারি কারো হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে জিডি করতে আসলে যদি তার সাথে মুক্তিপণ দাবির ঘটনা জড়িত থাকে তবে তা অপহরণের আলামত, এক্ষেত্রে এটি মামলাযোগ্য ঘটনা। তখন পুলিশ মামলা করতে বলে।

আইনগত সহায়তা –

কোন অপরাধ সম্পর্কে মামলা করতে গেলে আমরা প্রথমে ভাবি আমরা কি মামলাটি চালাতে পারব,খরচ বহন করা সম্ভব কিনা কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা সকল জেলা আদালতে সরকার কর্তৃক আইনগত সহায়তা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। আর্থিক ভাবে সামর্থ্যহীন ব্যক্তিরা এই সহযোগীতা নিতে পারে।

যখন একটি মামলা হয় তখন, এর বিচারের জন্যে আইনজীবী খরচ সহ নানা খরচ থাকে। তাই দুস্থ ব্যক্তিরা অপরাধের স্বীকার হলেও অনেক সময় সাহস করে মামলা করতে পারে না কেবল খরচের কথা ভেবে। আইন সহায়তা তহবিলের সাহায্য পেতে তহবিল কর্তৃক শর্ত পূরণ করতে হয়। এছাড়া,বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি,ব্লাস্ট,লিগ্যাল এইড সার্ভিস সহ বেশকিছু সংস্থা মামলা চালাতে অক্ষম ব্যক্তিদের আইনগত সহায়তা দিয়ে থাকে।

যে ভুল করবেন না-

যে ঘটনা মামলা করার যোগ্য তাতে জিডি না করে গুরুত্ব বুঝে মামলা করবেন, তা না হলে অপরাধের আলামত নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেক্ষেত্রে, পরবর্তীতে প্রমাণের অভাবে সঠিক বিচার নাও পেতে পারেন। আবার মিথ্যে মামলা করার চেষ্টা না করাই ভালো। যখন কাউকে ফাঁসাতে মিথ্যে মামলা দেয়া হয় তখন তদন্তে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত না হলে বরং হয়রানির পরিমাণ আপনারই বাড়বে। তাই উদ্দেশ্য মূলক মিথ্যে মামলায় যাওয়ার চেষ্টা না করাই ভালো।

উপসংহার

জিডি হলো মামলার প্রাথমিক পর্যায়, অনেকেই মামলা ও জিডিকে একি ভাবে। কিন্তু মামলা আর জিডি এক না। জিডি করার ক্ষেত্রে অনেক ব্যাপারে কোন খেয়াল না রাখতে হলেও মামলার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়।

admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *